মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

Valentine"s Exclusive(RJ Rajesh)

-তুমি কি আমার শার্টটা টেনে ছিঁড়বা? এভাবে ধরছ কেন?
-আগে ত কাঁধে হাত দিয়ে বসলে বলতা এভাবে হাত দিয়ে বসতে। এখন এমন করো কেন?
লিপির মনটা খারাপ আজ। যেই সমুদ্র তাকে বাইকে বসলে তার পেটে হাত দিয়ে বসতে বলত আজ সেই সমুদ্র এভাবে বসায় রাগ করছে। বিয়ের পর সব ভালোবাসা উবে গেছে ওর। লিপির মন খারাপের আরো কারন আছে। সবাই ভ্যালেন্টাইনের দিন ঘুরতে বের হয় আর ওরা ভ্যালেন্টাইনের আগের দিন ঘুরতে বের হইসে।
ভ্যালেন্টাইনের দিন ঘুরতে যেতে পারবে না কারন সমুদ্র নাকি আজ রাতে কি কাজে চট্টগ্রাম যাবে। তাই আজ ঘুরতে বের হওয়া ওদের। ঘুরতে বের হলে সমুদ্রের যেই ভালোবাসা প্রবণ ভাব ছিল লিপির প্রতি আজ তা নেই। অনেকটা দায়ে পড়ে ঘুরতে বেরিয়েছে এমন ভাব সমুদ্রের।
প্রেম করেই বিয়ে ওদের তবে পারিবারিক ভাবে। লিপি রাজী না থাকলেও সমুদ্রের ভালোবাসার জন্য লিপি রাজী হয়েছিল সমুদ্রের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে। আর তারপরই বিয়ে। কিন্তু লিপি সেই সমুদ্রের সাথে আজকের সমুদ্রের মিল পাচ্ছে না। কোথায় গেল সেই ভালোবাসা? বিয়ের পরেই কি সব ফ্যাকাশে হয়ে গেল?
লিপি ঘুরতে বের হলেও তার চশমার আড়ালে চোখটা একটু ভিজে গেছে কিন্তু তা সমুদ্রের চোখে পড়েনি। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর বাসায় ফিরল তারা। ঘুরতে গিয়ে লিপির মন ভালো হবার বদলে উল্টা খারাপ হয়ে গেছে। কলেজ লাইফে যেই সমুদ্র তাকে একটু দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকত বিরক্ত হত না আজ সে একটুতেই লিপির প্রতি বিরক্ত।
বাসায় এসেই ঝটপট রেডি হয়ে পড়ল সমুদ্র। তাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে অফিসের কাজে। বাইক নিবে না বাসে করে যাবে। টিকিট ও দেখেছে লিপি। অন্যদিন সমুদ্র দূরে গেলেও লিপির খারাপ লাগেনা কিন্তু আজ তার কেন জানি খুব কান্না আসছে। চশমা বার বার মুছতেছে সবার আড়ালে। সমুদ্র ঝটপট বেরিয়ে পড়ে। লিপি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে।
কাঁদছে তবে কেন কাঁদছে সে জানে না। হঠাৎ লিপির ফোন বেজে উঠল। ধরতে ইচ্ছে না করলেও ধরতে হবে তার একমাত্র ননদ ফোন করেছে।
-হ্যালো ভাবী?
-হুম বল রাফিয়া।
-ভাইয়া কই?
-তোমার ভাইয়া তো মাত্র চট্টগামের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল।
-কি বল? ভাইয়াকে ত মাত্র দেখলাম ঢাকা ক্লাবে ভাইয়ার কোন এক মেয়ে কলিগের সাথে।
লিপির কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। ফোনটা রেখে দিলো। এইজন্যই সমুদ্র তার প্রতি বিরক্ত হয় এত। ভালোবাসা থাকবে কি করে আর? নতুন আরেকজনের প্রেমে পড়েছে সে ভাবে লিপি। ফোন বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে সে। ১৪ ই ফেব্রুয়ারি যে তার জন্মদিন তাও কি সমুদ্র ভুলে গেছে?
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে লিপি। ঘুম ভাঙ্গল দরজায় ধাক্কার আওয়াজে। লিপি ভাবছে পৌনে ১২ টা বাজতে চলল কেউ তাকে ডাকেনি? আচ্ছা আব্বা আম্মা খেয়েছে তো? এই বোকার মত সে কিভাবে ঘুমিয়ে থাকল? উঠে গিয়ে দরজা খুলল। তার শ্বশুর দাঁড়িয়ে আছেন।
-মা শরীর খারাপ তোমার?
-নাহ আব্বা। আপনারা খেয়েছেন তো?
-হুম। চলো মা আজ বাপ বেটি এক জায়গায় যাবো।
বলেই লিপির হাত ধরে যেতে লাগল তার শ্বশুর। লিপিকে নিজের মেয়ে ছাড়া অন্য কিছু ভাবেন নি তিনি। লিপিকে নিয়ে চলে গেলেন বাড়ীর ছাদে। বাড়ী ছাদে গিয়ে লিপিকে বললেন
-মা তুমি দাঁড়াও আমি আসছি।
বলেই লিপি কে দাঁড় করিয়ে রেখে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন। লিপি ভাবল হয়ত কিছু আনতে মনে নেই তা আনতে গেছেন। তাইক ভেবে লিপি পেছন ঘুরতেই চমকে গেল। তার সামনে সমুদ্র হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে তার এক তোড়া গোলাপ ফুল! প্রোপজ সেই কলেজ লাইফের মত
-I love you
-তুমি চট্টগ্রাম যাওনি? (প্রচন্ড অবাক)
-প্রোপজ করছি উত্তর দাও।
-I hate you
সমুদ্র এই উত্তর শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। লিপির বুঝতে বাকী রইলো না সবই এই পাগলের প্ল্যান। কিন্তু আজ লিপি প্রতিশোধ নেমে তাকে কাঁদানোর। এত বড় সাহস তাকে কাঁদায়। সমুদ্র আবার বলে
-Happy birthday jan. I love you a lot.
-I hate you stupid.
-নিজের স্বামীরে স্টুপিড বলছ?
-আমাকে কাঁদাইছো তার শাস্তি পেতে হবে।
-বলুন মহারাণী কি শাস্তি?
-১০০ বার কানে ধরে উঠবস করো আর বল "আমি বাবা হচ্ছি"
-কি?
-শাস্তি না মানলে কোন কিছু বলব না।
রাত ১২:৩০ বাজে। গাজীপুরের কোন এক বাড়ীর ছাদে এক মেয়ে বাঁধন হারা খুশিতে হাসছে আর এক ছেলে তার সেই ভুবন ভোলানো হাসি আর চশমা ঢাকা চোখের খুশি দেখছে আর কানে ধরে উঠবস করে চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলছে
"আমি বাবা হচ্ছি। আমি বাবা হচ্ছি..
লেখা: ভালোবাসার তারছেঁড়া বালক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন