শনিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

"ভ্যালেন্টাইন্স'ড়ে ভালোবাসা"

"ভ্যালেন্টাইন্স'ড়ে ভালোবাসা"

.
.
একই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার সুবাদে তার সাথে প্রথম পরিচয়... পড়াশোনায়, আচার-অচরনে, চলায়, কথা-বার্তায়, অন্য সবার চাইতে সে অনেক উপরে... বলা বাহুল্য অহংকার আর রাগেও তার অবস্থান সবার উপরে!
.
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয় নীতিতে তার উপরেই জীবনের প্রথম ক্রাশটা খেয়েছিলাম... জানা ছিলনা ওর বড় ভাই এই এলাকারই হালকা-পাতলা মাস্তান... সদা সবর্দা ডজন-ডজন ছ্যালা প্যালা নিয়ে ঘুরাপেরা করে... প্রেমে যখন পড়েই গিয়েছি, তখন আর ভয় পেলে চলবে না!
.
আমার এই অনুর্বর মাথাটা নিয়ে সামনে এগুনোর রাস্তাই পাচ্ছিলাম না ভেবে... পরে খুব কাছের এক বন্ধুর কাছ থেকে, বুদ্ধি ধার করে কচ্ছপ গতিতে চলতে লাগলাম... রাত জেগে পড়া মুখস্ত করে পরদিন সবার সামনে সিনা টান-টান করে নিজের মেধার পরিচয় দিতে শুরু করলাম... তাতে যদি একটু পটে!
.
ক্রমেই ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করতে শুরু করল... শার্টের কলারের বুতাম মেরে বুক ফুলিয়ে চলে গেলাম বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিতে... তত্‍ক্ষনাত বোকা-বোকা চেহারাটা দেখে হো হো করে হেঁসে উঠল সে... হাতটাও বাড়িয়ে দিল... এই প্রথম মুখস্ত বিদ্যা পরিক্ষার খাতা বাদে অন্য কোথাও কাজে লাগল!
.
দেখতে দেখতে ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স'ড়ে চলে এল... বন্ধুত্বের কল্যানে সঞ্চিত সবটুকু সাহস নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শার্টের সব বুতাম খুলে... চড়া দামে দশ'টা লাল টুকটুকে গোলাপ কিনলাম... পাপড়ি গুলো ঠিক তার ঠোঁটের মত... ফুলের মিষ্টি গন্ধে সাহস আরো কয়েক'শ গুন বেড়ে গেল!
.
"আমি তোরে ভালোবাসি... অনেক ভালোবাসি... আই ল্যাব ইউ... কিছু একটা বলে আমায় উদ্ধার কর প্লীজ!"
... .... ....
.
চারিদিক নিস্তদ্ধ... কোন সাড়া-শব্দ নেই... শুধু তার অট্টহাসির হা হা... হি হি... হো হো... শব্দ আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলেছে... সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আমাকে দেখছে... এই মুহুর্ত্বে আমি কানে ধরে উঠ-বস করতেছি... তার গুন্ড়া ভাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে... হাতে হকিস্টিক!
.
সেই দিনের লাঞ্চনার পর সব আবেগ বাক্স বন্ধি করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছি... সে তো দূরে থাক, কোন মেয়ের দিকেই আর চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস করিনি... রোমান্টিক মুভির চ্যানেল দেখা বন্ধ করে দিয়েছি... না পড়া ভালোবাসার উপন্যাস গুলো দিয়ে কট-কটি খেয়ে ফেলেছি... নিজেকে বুঝিয়েছি, মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা... তাদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয়!
.
দেখতে দেখতে একটা বছর পেরিয়ে গেল... সব বন্ধুরা যখন গার্লফ্রেন্ড়/বয়ফ্রেন্ড় নিয়ে রোমাঞ্চ করছে... তখন আমি ঘাপটি মেরে ঘরের কোনে বসে আছি!
.
১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স'ড়ে... একে একে সব বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আমাকে... ভালোবাসা দিবসের নয়... পঞ্চাশ বার কানে ধরে উঠ-বস করে লাঞ্চিত হয়ে ছ্যাঁকা খাওয়ার এক বছর ফুর্তির... কাঁটা গায়ে নূনের ছিঁড়া খাওয়া কি তা খুব ভালো ভাবে উপলদ্ধি করতেছি!
.
ট্যাঁও ট্যাঁও শব্দ করে ফোনে একটা টেক্স আসলো... দেখে তো চোখ আমার কপালে উঠে গেল... তাতে লেখা;
.
"ঐদিন তোর সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি আমার... আমি তোর ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি... জানিস আমি অনেক কেঁদেছি পরে... আমি তোকে ভালোবাসি... অনেক ভালোবাসি... কিছু একটা বলে উদ্ধার কর আমায়!"
.
রাগে জ্বলতে জ্বলতে ওকে ফোন দিলাম;
.
"হারামজাদী... গাধী... বজ্জাতী... শুধু ভালোবাসি বলেই আজ বেঁচে গেলি!"
.
"আমি কোচিংয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছি... আসার সময় ঠিক দশ'টা লাল গোলাপ আনবি... ভয় পাস না, আমার ভাইয়া দেশে নাই!"
.
অতঃপর আমিও আর একা নই... একজোড়া রাগি হাত... যা সব-সময় আমাকে শাসন করে যাবে... কিংবা এলো চুল গুলো আদর করে গুছিয়ে দিবে... ভালোবাসি... অনেক বেশি ভালোবাসি!
... ... ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন