বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

মারিয়া ও আমি..!!

মারিয়া ও আমি!

লিখাঃ শেষ সন্ধ্যার কবি

-আপনি কোথায়?
-রুমে! কেনো?
-একটু দেখা করা যাবে?
-কখন?কোথায়?
-আপনার এত কিছু বলার দরকার নেই! শুধু বলেন দেখা করা যাবে কি যাবে না?
মারিয়ার কথাবার্তায় কেমন এক অদৃশ্য ছটফটানি মিশে আছে।ওর এই চঞ্চলতাটাকে নিভৃত করতে চাচ্ছিলাম না।বলেই দিলাম,
-হুম।দেখা করা যাবে!
রুমের দরজা খোলা ছিল।বলতে না বলতেই রুমের দরজা ঠেলে মেয়েটা নির্লজ্জভাবে ঢুকে গেল!মেয়েটা আজ হিজাব পড়েছে।আসলেই হিজাব পড়লেই মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে!চোখের নিচে কাজল দেখাতে চেহারার মায়া অনেকগূণ বেড়ে গেছে!
অপ্রস্তুত আমি প্রস্তুত হবার জন্য খুব পাশে থাকা শার্টেই ভিতরে নিজেকে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি।
-(মেয়েটি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে)
আচ্ছা আমাকে দেখে এত তাড়াহুড়ো করে শার্ট পরার কি দরকার ছিল? ধীরে ধীরে পরলেই তো পারতেন।আমরা আমরাই তো?
-কি বলবে বল....!
-বলছিই তো!!
-এসব ফালতু কথা রাখো।হঠাত এখানে এসেছো কেন?
-কেন? আসা যাবে না?
-যাবে কিন্তু...
আমাকে কথা বলতে না দিয়ে মারিয়া একনাগারে বলতে লাগল,
-আসব! একশবার আসব! আপ নার কী!হুহ! আর শোনেন এসব লুঙি-ফুঙি কিন্তু বিয়ের পর পরা যাবে না!!
-কথা বলার অন্য কোন টপিক নেই?
-না নেই।যা বললাম মনে থাকে যেন।
-সমস্যাটা কোথায়? বাঙালি ছেলে আর লুঙি পরব না কেন?
-এত কৈফিয়ত দিতে পারব না।বলেছি তো বলেছি!!
-দেখা যাবে!!
অবশেষে ক্ষণিকের জন্য মারিয়া শান্ত হল।কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
-আচ্ছা আমরা কি বিয়ের পর এখানেই থাকব?
-হুম। এখানেই।
-ভ্রু কুঁচকে মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
কিই?এই এক রুমে কিভাবে থাকব? আই মিন এরকম ছুপড়ি ঘরে থাকার অভ্যাস নেই আমার!
-সেইজন্যই তো বলছি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেন!
-থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে আছে? সমস্যা নেই! এক রুমেই চলবে!
-গ্যাসের চুলা নেই কিন্তু!মাটির চুলায় রান্না করতে হবে!
-এইটা কিছু হইল? আমি মাটির চুলায় আগুন ধরাতে পারি না।
-শিখে নিবে!
-পারব না!!
-তাহলে আমিও চললাম! অন্য কাউকে বিয়ে করো!
মেয়েটির চোখ ছলছল করছে! মায়া চোখের থেকে এই বৃষ্টিবর্ষণ করলে বলে।মেয়েটিকে কাঁদাতে আমার খুব একটা ভাল লাগে না।আমি শুধু চাই মেয়েটি আমাকে ছেড়ে চলে যাক!! কেন? কারণটা অন্যদিনই না হয় বলব। হয়তো মনের গভীর প্রকোষ্ঠে অনেক কষ্ট হবে কিন্তু তবুও তো.....
নিজের কাছেই প্রশ্ন করলাম কি করে মেয়েটিকে সুখে রাখব?
মেয়েটি চোখের পানি আড়াল করে অভিমানী কন্ঠে বলল,
-আচ্ছা আপনার কি আমাকে কাঁদিয়ে খুব ভাল লাগে?
-না তো।
-তাহলে?
মেয়েটির প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই।কথার প্রসঙ পালটানোর জন্য বললাম,
-বই মেলায় যাবে?
-কেন? আমাকে দেখে সাধ মেটছে না?
-না। তা কেন?
-আমি জানি আমাকে আপনার ভালোই লাগে না।মেলায় যাবেন অন্য মেয়েদের দেখার জন্য।হুহ!
-আমি সব সময় মাথা নিচু করে হাঁটি।অন্য মেয়ের প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই
-সেটাই যেন হয়!! অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে গরম খুন্তি দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলব।মনে থাকে যেন!
অতঃপর একজন অন্যের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ওঠা!!
মেয়েটা হাসি থামিয়ে বলল,
-হয়েছে! আর হাসতে হবেনা!খেয়েছেন কিছু?
-হুম।খেয়েছি।চা আর সিগা.......
মুখ ফসকে বের হয়ে যাচ্ছিল সিগারেটের কথা! নিজের উপর রাগ হচ্ছিল।মেয়েটা বুঝে গেছে! মেয়েটাকে কথা দিয়েছিলাম আর খাব না।মেয়েটা চোখ বড় বড় করে বলল,
-আবার সিগারেট?
-আরে সিগারেট না।সিঙারা!
-ফাজলামি পেয়েছেন? এই সকালে সিঙারা কোথায় পাবেন? মিথ্যা বলছেন কেন?
-না মানে! আসলে হয়ছে কি....
কথা শেষ করতে না দিয়ে মেয়েটি আমার জন্য রান্না করে আনা পায়েস টেবিলে রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছে!যাবার আগে বলে গেল,
-আপনি আর কোন দিন আমার সাথে কথা বলবেন না। কোনদিন না।
মেয়েটাকে আটকালাম না।যে যেতে চায় তাকে আটকানো যাবে না।
মন বলছে সে আসবে।আসবেই!
To be continued.......!
-
-
_______ শেষ সন্ধ্যার কবি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন