- ★ এ কেমন ভালবাসা ?★--??
------------------- ★------------------
রাত ৯'টা মুষল ধারে বৃষ্টি নেমেছে , বেলকুনিতে আনমনা হয়ে দাড়িয়ে হৃদিতা , হঠাৎ চোখ দুটো নিচে পরতেই , দেখে সেই ছেলেটি ''মেঘ'' এই ছেলেটিকে গত দু'মাস ধরেই হৃদিতার কলেজ থেকে বাসা অবধি , হৃদিতার পথ অনুসরণ করতে দেখা যায়,,, হৃদিতা মেঘের পানে চেয়ে ভাবছে ছেলেটি আসলে কি পাগল? যদি পাগল নাই বা হবে তবে রাতের আধারে আমার বাড়ির সামনেই বা কেন দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে ! মেঘ নিচ থেকে তাকিয়ে আছে হৃদিতার পানে অপলক দৃষ্টিতে ,, এতক্ষণ সে হৃদিতার জন্যেই অপেক্ষায় ছিলো , কখন হৃদিতা বারান্দায় আসবে,, তাকে একটি নজর দেখেই চলে যাবে ,, কিন্তু সেই সন্ধ্যে বেলা থেকে রাত নয়টা ,, এরই মধ্যে কখন যে বৃষ্টি নামলো ! মেঘ তা খেয়ালই করেনি,,, হিম বাতাস বইছে মেঘ থরথর করে কাপছে , হৃদিতাকে বারান্দায় দেখে , মেঘের মুখে ফুটে উঠলো এক চিলটে হাসি,,,, দু'মাস ধরে শুধু দেখেই যাচ্ছে কখনোই সামনা-সামনি সাহস করে কথা বলা হয়ে উঠেনি ,, ছেলেটি তার গত দু'মাসের সমস্ত সাহসকে পুঁজি করে আজ মেয়েটির বেলকুনির নিচে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে ! ছেলেটি নির্বাক কেউ তার কন্ঠ নালি চেপে ধরেছে, ভেতর থেকে কথা বেরুতে দিচ্ছেনা ,, মেয়েটি বারান্দায় দাড়িয়ে ছেলেটির পানে চেয়ে মিটি মিটি হাসছে , মেঘ আদৌ চেষ্টা করে যাচ্ছে,, মেয়েটিকে সে বলবে ''এই মেয়ে তুমি এত মিষ্টি হাসি কোথায় পাও? তোমার ঐ মায়াবী চেহারার পবিত্র হাসি-টুকু দেখলেই যে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই ! যত বার দেখি ততবার'' অতঃপর কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্হান করলো , না '' আজও মেঘ সাহস করে কিছু বলতে পারেনি , তার হাসিমাখা মুখটা যেন মূহুর্তেই মলিন হয়ে গেলো ! এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলো ছেলেটিকে আর কলেজের ধারে কাছেও দেখা যায়না, মেঘের বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস নেই, সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে প্রচণ্ড জ্বর আসে তার,, দশ দিন পর ছেলেটি একটি ফুচকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে , হৃদিতা কলেজ থেকে বের হয়ে এদিকটায় ই এগিয়ে আসছে , �ছেলেটি মাথার চুল ঠিক করে নিলো , সাথে তার বান্ধবীরাও আসছে , মেয়েটির চোখে চোখ পড়তেই ! মেঘ তার মাথাটা নুইয়ে দিলো..
.
--এই ছেলে তুমি প্রতিনিয়ত আমার পিছু নাও কেন? সেদিন দেখলাম আমার বাসার নিচেও দাড়িয়ে ছিলে , মতলব টা কি? শুনি?..
--না' ইয়ে মানে কিছু না এমনিতেই ।
--তুমি তোঁ এই কলেজে পড়ো বলে মনে হয়না , তবে এখানে কি করো?
--না মানে.....
--না মানে.. কি? কথা বলতে অসুবিধে হয়?
--আমার এই জায়গাটা খুব পছন্দের , তাই এখানটায় ছুটে আসতে ইচ্ছে করে বার বার..
--বাব্বা , কথা তোঁ ভালই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পারো দেখছি ..
--(মেঘ নিরোত্তর) হৃদিতা মেঘ'কে বখাটে ছেলেদের মত ভেবে চট করে ছোট্ট আকারে একটি মিথ্যে বলে দিলো হৃদিতা...
-- এই ছেলে শুনো .....
--হুম...
--আমি একজন বিবাহিতা , আর একজন বিবাহিতার পিছু নেয়াটা কি ঠিক? আমার স্বামী যদি জানতে পারে তুমি আমার পিছু নাও তবে....(হৃদিতার মুখে হাত দিয়ে আটকে ধরলো তার বান্ধবী ইতিকা) ছেলেটি একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো , লজ্জায় তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো, হয়তো এত মানুষের বিড়ে অন্তত তার মত একটি ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের কাঁন্না মানায় না সেও ছোট্ট করে একটি কথাই বললো ....
-- আই'ম সো স্যরি.... বলেই মেঘ তার আপন গন্তব্যের দিকে হাঁটা দিলো, ছেলেটির নিজের প্রতি প্রবল ঘৃণা হচ্ছিলো ...
--(মেয়েটি আবারও বলছে) আর কখনও তোমাকে এই কলেজের ধারে কাছেও যেন , না দেখি...
ছেলেটির চোখে জল মেয়েটির মুখে হাসি ''ওফ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম'' হৃদিতার বান্ধবী কিছুক্ষণ আচ্ছা করেই ঝাড়ি দিলো হৃদিতাকে ...
--তুই এই কাজটা মোটেও ঠিক করিসনি ! ছেলেটি তোকে ভালবাসে আর তুই.. ছিঃ এতবড় মিথ্যা কথা বলতে পারলি,,,,?
--হ্যাঁ মিথ্যে আমি বলেছি তাতে তোর কি? তোর যদি এতই দরদ , তাহলে তুই গিয়ে প্রেম করনা..! এমন প্রেমিক অনেক দেখেছি, আজ আসতে বারণ করেছি কাল সকালেই দেখবি পুনরায় আমার পিছু নিবে, যত্তসব ফালতু ছেলে !
--না'রে তবুও আমার যেন কেমন মনে হলো , এই ছেলেটি একটু অন্যরকম , তাছাড়া সে তো , তোকে কোনোদিন বিরক্ত করেনি...!
--ঐ তুই চুপ করবি..!
--ওকে বাবা তোর ইচ্ছে ....
হৃদিতা একটি শক্ত মনের মেয়ে , এক কথায় পাথর , সেই ৬ মাস বয়সেই মা'কে হারায় , সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়েছে ... সৎ মায়ের কাছ থেকে মায়া মমতার বদলে পেয়েছে অনাদর ,কষ্ট , অবজ্ঞা আর অবহেলা , তাই সে নিজেকে কারো সাথে এই ভালবাসার মিথ্যে মায়াজালে জরাতে চায়না... হৃদিতার কাছে ভালবাসা ক্ষনিকের মোহ মাত্র , কাউকে ভালবাসলে হয়ত সেই মানুষটি আবেগে বশীভূত হয়ে আমাকে পাগলের মত ভালবাসবে কিন্তু দু'দিন পরেই সেটা বাষ্প হয়ে শিশির বিন্দুর মত করে উড়ে যাবে! যা আজ আছে কাল ময়লা আবর্জনা মনে করে নর্দমায় ছুড়ে ফেলে দিবে ।
.
অতঃপর দু'মাস পর মেঘ হৃদিতার কথাই রেখেছে , আজ পর্যন্ত সে কখনোই হৃদিতার পথে পা মাড়ায়নি , হৃদিতা ও নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো .. আসলে আমারই ভুল ছিলো ! ছেলেটি আর দশটা ছেলের মত সে মোটেও নয়... সেদিন এরূপ ব্যাপার করাটা আমার একদমই উচিত হয়নি.. অন্তত একটু ভাল করে হলেও বলতে পারতাম,, এখন মেয়েটির চোখ দুটো শুধু রাস্তার আনাচে কানাচে ছেলেটিকে খুঁজে বেড়ায় .. তাকে সামনে পেলেই আচ্ছা করে ঝাড়ি দিবো আর স্যরি বলে দিবো,,,,
৭ দিন পর... পরন্ত বিকেল হৃদিতা কোচিং শেষে বাসায় ফিরছে একা,, আচমকাই শো শো করে বাতাস বইতে শুরু করলো.... সেই সাথে মুষল ধারে বৃষ্টি নামলো হৃদিতা দৌড়ে রাস্তার পাশের বট তলায় আশ্রয় নিলো ,, একটি ছেলে ছাতা হাতে বট তলায় দাড়িয়ে , মুখ ঘুরোতেই হৃদিতা দেখতে পেলো ''মেঘ'' হৃদিতা ছেলেটিকে মুখোমুখি দেখে মাথাটা নুইয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে , হৃদিতা কল্পনায় ও ভাবেনি ''মেঘ কে সে এত নিকটেই পাবে , হৃদিতা ভেবেই নিয়েছিলো হয়ত বা আর কোনোদিন ও মেঘের সাথে তার মুখোমুখি দেখা হবেনা ... মেঘ নিরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করলো...
-- স্যরি... আমি আসলে ইচ্ছে করে তোমার এলাকায় আসিনি এখানে এক বন্ধুর বিয়েতে এসেছিলাম,, আমি গাড়ি মিস করেছি তাই এখানে সি,এন,জি'র জন্য অপেক্ষা করছিলাম , আমি ইচ্ছে করে তোমার সামনে আসিনি ... ( হৃদিতা নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে ) তুমি তোঁ ভিজে যাচ্ছ, এইযে ধরো আমার ছাতাটা..... আমার কোনো সমস্যা হবেনা , আমার বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আছে ( মেঘ ছাতাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে) আমি তাহলে আসি ( তখনও ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে) বেঁচে থাকলে আর কোনোদিন ও দেখা হবেনা , আর যদি ভুলেও তোমার সামনে পরে যাই ক্ষমা করে দিও । মেঘ চলে যেতে চাইলে পেছন থেকে হৃদিতার বাহুডোরে মেঘকে শক্ত করে ধরলো...
--স্যরি...
--স্যরি বলছ কেন?
--আমি আমি আমি....
--আমি আমি কি? বলো ...
--আমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম... আমি এখনও অবিবাহিতা । আমার এই একটি খুব বাঁজে অভ্যাস কাউকে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করতে পারিনা,,
--তোঁ ....!
--আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,
--কিন্তু কিভাবে ? আমিও তোঁ তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারি..!
--মোটেও না , যদি করতে , আমি যেদিন বলেছিলাম তুমি আর এই কলেজের সামনে আসবেনা, তুমি অবশ্যই আসতে , কিন্তু তুমি এলেনা,, সেই থেকেই আমার মনে তোমার প্রতি একটু একটু করে বিশ্বাস জন্মেছে , আমার সব ভুল ধারণাকে তুমি মিথ্যে প্রমাণিত করেছ...
--হুম,
--কি হুম? কিছু বলো..
--কি বলবো..?
--তোমার যা ইচ্ছে , আজ আর তোমাকে বাধা দেব না ...
--না ভয় হয় যদি সেদিনের মত আবার বকা দাও!
--ধূরর গাধা.. তুমি একটা ভিতুর ডিম, কথাটা বলেই হৃদিতা ফিক করে হেসে দিলো....
--তোমার এই হাত দুটো ধরে আমার জীবনের বাকিটুকু পথ পাড়ি দিতে চাই... দিবে কি? হাত দুটো বাড়িয়ে !
--হৃদিতার মুখ থেকে ছোট্ট একটি শব্দ বের হলো ''হুম'' বৃষ্টি থেমে গিয়েছিলো রাস্তার চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো ,, হৃদিতার চোখের কোন থেকে দু'ফোটা অশ্রু তার গাল বেয়ে পড়লো ছেলেটি বললো ...
--এখন যাব তবে সারাজীবনের জন্যে নয় ক্ষণিকের জন্যে , বেঁচে থাকলে কাল আবার দেখা হবে, খানিকটা পথ হাটার পর মেঘ পিছন ফিরে তাকাতেই হৃদিতা স্থির ওখানটাই দাড়িয়ে আছে,, ওর চোখ দুটো ছলছল করছে , মেয়েটি হয়ত আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো , কথায় বলেনা মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফুটেনা ॥
.
.
→ ✒ written by →শেষ সন্ধ্যার কবি
রাত ৯'টা মুষল ধারে বৃষ্টি নেমেছে , বেলকুনিতে আনমনা হয়ে দাড়িয়ে হৃদিতা , হঠাৎ চোখ দুটো নিচে পরতেই , দেখে সেই ছেলেটি ''মেঘ'' এই ছেলেটিকে গত দু'মাস ধরেই হৃদিতার কলেজ থেকে বাসা অবধি , হৃদিতার পথ অনুসরণ করতে দেখা যায়,,, হৃদিতা মেঘের পানে চেয়ে ভাবছে ছেলেটি আসলে কি পাগল? যদি পাগল নাই বা হবে তবে রাতের আধারে আমার বাড়ির সামনেই বা কেন দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে ! মেঘ নিচ থেকে তাকিয়ে আছে হৃদিতার পানে অপলক দৃষ্টিতে ,, এতক্ষণ সে হৃদিতার জন্যেই অপেক্ষায় ছিলো , কখন হৃদিতা বারান্দায় আসবে,, তাকে একটি নজর দেখেই চলে যাবে ,, কিন্তু সেই সন্ধ্যে বেলা থেকে রাত নয়টা ,, এরই মধ্যে কখন যে বৃষ্টি নামলো ! মেঘ তা খেয়ালই করেনি,,, হিম বাতাস বইছে মেঘ থরথর করে কাপছে , হৃদিতাকে বারান্দায় দেখে , মেঘের মুখে ফুটে উঠলো এক চিলটে হাসি,,,, দু'মাস ধরে শুধু দেখেই যাচ্ছে কখনোই সামনা-সামনি সাহস করে কথা বলা হয়ে উঠেনি ,, ছেলেটি তার গত দু'মাসের সমস্ত সাহসকে পুঁজি করে আজ মেয়েটির বেলকুনির নিচে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে ! ছেলেটি নির্বাক কেউ তার কন্ঠ নালি চেপে ধরেছে, ভেতর থেকে কথা বেরুতে দিচ্ছেনা ,, মেয়েটি বারান্দায় দাড়িয়ে ছেলেটির পানে চেয়ে মিটি মিটি হাসছে , মেঘ আদৌ চেষ্টা করে যাচ্ছে,, মেয়েটিকে সে বলবে ''এই মেয়ে তুমি এত মিষ্টি হাসি কোথায় পাও? তোমার ঐ মায়াবী চেহারার পবিত্র হাসি-টুকু দেখলেই যে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই ! যত বার দেখি ততবার'' অতঃপর কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্হান করলো , না '' আজও মেঘ সাহস করে কিছু বলতে পারেনি , তার হাসিমাখা মুখটা যেন মূহুর্তেই মলিন হয়ে গেলো ! এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলো ছেলেটিকে আর কলেজের ধারে কাছেও দেখা যায়না, মেঘের বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস নেই, সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে প্রচণ্ড জ্বর আসে তার,, দশ দিন পর ছেলেটি একটি ফুচকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে , হৃদিতা কলেজ থেকে বের হয়ে এদিকটায় ই এগিয়ে আসছে , �ছেলেটি মাথার চুল ঠিক করে নিলো , সাথে তার বান্ধবীরাও আসছে , মেয়েটির চোখে চোখ পড়তেই ! মেঘ তার মাথাটা নুইয়ে দিলো..
.
--এই ছেলে তুমি প্রতিনিয়ত আমার পিছু নাও কেন? সেদিন দেখলাম আমার বাসার নিচেও দাড়িয়ে ছিলে , মতলব টা কি? শুনি?..
--না' ইয়ে মানে কিছু না এমনিতেই ।
--তুমি তোঁ এই কলেজে পড়ো বলে মনে হয়না , তবে এখানে কি করো?
--না মানে.....
--না মানে.. কি? কথা বলতে অসুবিধে হয়?
--আমার এই জায়গাটা খুব পছন্দের , তাই এখানটায় ছুটে আসতে ইচ্ছে করে বার বার..
--বাব্বা , কথা তোঁ ভালই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পারো দেখছি ..
--(মেঘ নিরোত্তর) হৃদিতা মেঘ'কে বখাটে ছেলেদের মত ভেবে চট করে ছোট্ট আকারে একটি মিথ্যে বলে দিলো হৃদিতা...
-- এই ছেলে শুনো .....
--হুম...
--আমি একজন বিবাহিতা , আর একজন বিবাহিতার পিছু নেয়াটা কি ঠিক? আমার স্বামী যদি জানতে পারে তুমি আমার পিছু নাও তবে....(হৃদিতার মুখে হাত দিয়ে আটকে ধরলো তার বান্ধবী ইতিকা) ছেলেটি একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো , লজ্জায় তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো, হয়তো এত মানুষের বিড়ে অন্তত তার মত একটি ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের কাঁন্না মানায় না সেও ছোট্ট করে একটি কথাই বললো ....
-- আই'ম সো স্যরি.... বলেই মেঘ তার আপন গন্তব্যের দিকে হাঁটা দিলো, ছেলেটির নিজের প্রতি প্রবল ঘৃণা হচ্ছিলো ...
--(মেয়েটি আবারও বলছে) আর কখনও তোমাকে এই কলেজের ধারে কাছেও যেন , না দেখি...
ছেলেটির চোখে জল মেয়েটির মুখে হাসি ''ওফ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম'' হৃদিতার বান্ধবী কিছুক্ষণ আচ্ছা করেই ঝাড়ি দিলো হৃদিতাকে ...
--তুই এই কাজটা মোটেও ঠিক করিসনি ! ছেলেটি তোকে ভালবাসে আর তুই.. ছিঃ এতবড় মিথ্যা কথা বলতে পারলি,,,,?
--হ্যাঁ মিথ্যে আমি বলেছি তাতে তোর কি? তোর যদি এতই দরদ , তাহলে তুই গিয়ে প্রেম করনা..! এমন প্রেমিক অনেক দেখেছি, আজ আসতে বারণ করেছি কাল সকালেই দেখবি পুনরায় আমার পিছু নিবে, যত্তসব ফালতু ছেলে !
--না'রে তবুও আমার যেন কেমন মনে হলো , এই ছেলেটি একটু অন্যরকম , তাছাড়া সে তো , তোকে কোনোদিন বিরক্ত করেনি...!
--ঐ তুই চুপ করবি..!
--ওকে বাবা তোর ইচ্ছে ....
হৃদিতা একটি শক্ত মনের মেয়ে , এক কথায় পাথর , সেই ৬ মাস বয়সেই মা'কে হারায় , সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়েছে ... সৎ মায়ের কাছ থেকে মায়া মমতার বদলে পেয়েছে অনাদর ,কষ্ট , অবজ্ঞা আর অবহেলা , তাই সে নিজেকে কারো সাথে এই ভালবাসার মিথ্যে মায়াজালে জরাতে চায়না... হৃদিতার কাছে ভালবাসা ক্ষনিকের মোহ মাত্র , কাউকে ভালবাসলে হয়ত সেই মানুষটি আবেগে বশীভূত হয়ে আমাকে পাগলের মত ভালবাসবে কিন্তু দু'দিন পরেই সেটা বাষ্প হয়ে শিশির বিন্দুর মত করে উড়ে যাবে! যা আজ আছে কাল ময়লা আবর্জনা মনে করে নর্দমায় ছুড়ে ফেলে দিবে ।
.
অতঃপর দু'মাস পর মেঘ হৃদিতার কথাই রেখেছে , আজ পর্যন্ত সে কখনোই হৃদিতার পথে পা মাড়ায়নি , হৃদিতা ও নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো .. আসলে আমারই ভুল ছিলো ! ছেলেটি আর দশটা ছেলের মত সে মোটেও নয়... সেদিন এরূপ ব্যাপার করাটা আমার একদমই উচিত হয়নি.. অন্তত একটু ভাল করে হলেও বলতে পারতাম,, এখন মেয়েটির চোখ দুটো শুধু রাস্তার আনাচে কানাচে ছেলেটিকে খুঁজে বেড়ায় .. তাকে সামনে পেলেই আচ্ছা করে ঝাড়ি দিবো আর স্যরি বলে দিবো,,,,
৭ দিন পর... পরন্ত বিকেল হৃদিতা কোচিং শেষে বাসায় ফিরছে একা,, আচমকাই শো শো করে বাতাস বইতে শুরু করলো.... সেই সাথে মুষল ধারে বৃষ্টি নামলো হৃদিতা দৌড়ে রাস্তার পাশের বট তলায় আশ্রয় নিলো ,, একটি ছেলে ছাতা হাতে বট তলায় দাড়িয়ে , মুখ ঘুরোতেই হৃদিতা দেখতে পেলো ''মেঘ'' হৃদিতা ছেলেটিকে মুখোমুখি দেখে মাথাটা নুইয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে , হৃদিতা কল্পনায় ও ভাবেনি ''মেঘ কে সে এত নিকটেই পাবে , হৃদিতা ভেবেই নিয়েছিলো হয়ত বা আর কোনোদিন ও মেঘের সাথে তার মুখোমুখি দেখা হবেনা ... মেঘ নিরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করলো...
-- স্যরি... আমি আসলে ইচ্ছে করে তোমার এলাকায় আসিনি এখানে এক বন্ধুর বিয়েতে এসেছিলাম,, আমি গাড়ি মিস করেছি তাই এখানে সি,এন,জি'র জন্য অপেক্ষা করছিলাম , আমি ইচ্ছে করে তোমার সামনে আসিনি ... ( হৃদিতা নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে ) তুমি তোঁ ভিজে যাচ্ছ, এইযে ধরো আমার ছাতাটা..... আমার কোনো সমস্যা হবেনা , আমার বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আছে ( মেঘ ছাতাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে) আমি তাহলে আসি ( তখনও ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে) বেঁচে থাকলে আর কোনোদিন ও দেখা হবেনা , আর যদি ভুলেও তোমার সামনে পরে যাই ক্ষমা করে দিও । মেঘ চলে যেতে চাইলে পেছন থেকে হৃদিতার বাহুডোরে মেঘকে শক্ত করে ধরলো...
--স্যরি...
--স্যরি বলছ কেন?
--আমি আমি আমি....
--আমি আমি কি? বলো ...
--আমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম... আমি এখনও অবিবাহিতা । আমার এই একটি খুব বাঁজে অভ্যাস কাউকে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করতে পারিনা,,
--তোঁ ....!
--আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,
--কিন্তু কিভাবে ? আমিও তোঁ তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারি..!
--মোটেও না , যদি করতে , আমি যেদিন বলেছিলাম তুমি আর এই কলেজের সামনে আসবেনা, তুমি অবশ্যই আসতে , কিন্তু তুমি এলেনা,, সেই থেকেই আমার মনে তোমার প্রতি একটু একটু করে বিশ্বাস জন্মেছে , আমার সব ভুল ধারণাকে তুমি মিথ্যে প্রমাণিত করেছ...
--হুম,
--কি হুম? কিছু বলো..
--কি বলবো..?
--তোমার যা ইচ্ছে , আজ আর তোমাকে বাধা দেব না ...
--না ভয় হয় যদি সেদিনের মত আবার বকা দাও!
--ধূরর গাধা.. তুমি একটা ভিতুর ডিম, কথাটা বলেই হৃদিতা ফিক করে হেসে দিলো....
--তোমার এই হাত দুটো ধরে আমার জীবনের বাকিটুকু পথ পাড়ি দিতে চাই... দিবে কি? হাত দুটো বাড়িয়ে !
--হৃদিতার মুখ থেকে ছোট্ট একটি শব্দ বের হলো ''হুম'' বৃষ্টি থেমে গিয়েছিলো রাস্তার চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো ,, হৃদিতার চোখের কোন থেকে দু'ফোটা অশ্রু তার গাল বেয়ে পড়লো ছেলেটি বললো ...
--এখন যাব তবে সারাজীবনের জন্যে নয় ক্ষণিকের জন্যে , বেঁচে থাকলে কাল আবার দেখা হবে, খানিকটা পথ হাটার পর মেঘ পিছন ফিরে তাকাতেই হৃদিতা স্থির ওখানটাই দাড়িয়ে আছে,, ওর চোখ দুটো ছলছল করছে , মেয়েটি হয়ত আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো , কথায় বলেনা মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফুটেনা ॥
.
.
→ ✒ written by →শেষ সন্ধ্যার কবি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন