বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সরল প্রেম

সরল প্রেম

------------

(দাড়িয়ে আছি আর দেখছি চারপাশের
পরিবেশ।মানুষ গুলো যেন কেমন
ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে।যে যার
নিজের জন্য ব্যস্ত।কেউ কারোর
দিকে তাকানোর সময়টুকু যেন
পাচ্ছেনা।পকেট থেকে কাগজটা বের
করে একবার দেখে নিলাম। হ্যা, ঠিক
বাড়িতেই এসেছি।দারোয়ানের
সাথে কথা বলার জন্য গেটে দুইবার
টোকা দিলাম।দেখলাম দারোয়ান
আসছে।এসেই বললেন কাকে চাই......
প্যান্টের পকেট থেকে চিঠিটা বের
করে দিলাম এবং বললাম
যে চিঠিটা বাড়িওয়ালা কে দিতে।
উনি বললেন তিনি বাড়িতে নেই।
অগত্যা বাইরেই বসে থাকতে হল।
অনেক্ষন পরে মনে হল যে পেছন
থেকে কেউ যেন কিছু বলছে।
=কি হল সরে যেতে পারছেননা?
এভাবে বাড়ির
সামনে দাড়িয়ে আছেন কেন?রহিম
চাচা কি হচ্ছে এইসব?
:না,আপামনি আসলে ইনি স্যারের
কাছে এসেছেন।আর এই
যে এইটা স্যারকে দিতে বললেন।
=ও,তাহলে বাইরে বসিয়ে রেখেছ কেন।
ভেতরে নিয়ে আসলেই তো হয়।
----------
এবার যেন একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম।
একেতে শহরে নতুন।তারপরে আবার এমন
অবস্থা।দারোয়ান
এসে ভিতরে নিয়ে তার
ঘরে বসতে দিলেন।অনেক্ষন বসে থাকার
পরে দারোয়ান এসে বলল যে
বাড়ির কর্তা এসেছেন।
সেখানে যাওয়ার পরে তার
কাছে চিঠি দিলাম।তিনি পড়ার
পরে বললেন স্যার(আমার বাবা)কেমন
আছেন। বললাম তিনি বেশী ভাল নেই।
এরপরে তিনি বললেন তুমি যতদিন
ইচ্ছা থাকতে পারে।দারোয়ান তার
পাশের রুমটা দেখিয়ে বললেন
যে এখানে তুমিই থাকবে।যাই হোক
এতক্ষন পরে ভরসা পেলাম।
ঘর গুছাতে লাগলাম।
জানালা খুলতে গিয়ে দেখলাম সেই
মেয়েটা তার ঘরের সামনে এসে চুল
আচড়াচ্ছে।মনের
কৌতুহলতাকে দুরে সরিয়ে দিয়ে চৌকির
পরে এসে একটু শোবার
প্রস্তুতি নিতে যাব তখন দারোয়ান
আসল।তাই তার সাথে গল্প
করতে বসে গেলাম।কথায় কথায়
জানতে পারলাম
যে মেয়েটা বাড়িওয়ালার একমাত্র
ছোট বোন।
-------------------
দিনে দিনে সবার সাথেই বেশ
সখ্যতা গড়ে উঠল।কিন্তু ঐ মেয়েটার
সাথেই বেশী কথা বলা হতনা।নিয়মিত
কলেজে আসা যাওয়া করতে লাগলাম।
হঠাত
দেখি মেয়েটা আমি যে কলেজে পড়ি সেই
কলেজেই পড়ে।পরে জানলাম যে আমার
নিচের ক্লাসে পড়ে।এর পর
থেকে মাঝে মাঝে নিজেই
মেয়েটার সাথে কথা বলার
চেষ্টা করতাম কিন্তু ব্যার্থ হতাম।একদিন
ঘরে বসে পড়ছি হঠাত মেয়েটি ঘরের
সামনে এসে ডাক দিল। যাওয়ার
পরে মেয়েটি ম্যাথের একটা সমস্যার
কথা বলল।একটি অপ্রঅস্তুত হয়ে গেলেও
কোনমতে বুঝিয়ে দিলাম
কিন্তু আশ্চর্য হলাম যখন বুঝচ্ছিলাম
দেখে মনে হলনা যে ওর কোন
সমস্যা আছে।শূধুই চুপ করে হাসছিল।সেই
দিন সন্ধা বেলায় হঠাত আমিনুল ভাই
(বাড়ির মালিক)ডাক দিল।মনে মেন ভয়
পেলাম। কোন ভুল করেছি কিনা এমন
কথা ভাবতে ভাবতে গেলাম।কিন্তু হল
বিপরীত। উনি ওকে প্রাইভেট পড়ানোর
কথা বললেন।
না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
ওকে প্রাইভেট পড়াতে লাগলাম।হঠাত
ও একদিন একটা অপ্রত্যাশিত কাজ করল।ও
আমার ফোন টা কেড়ে নিয়ে কিছুক্ষন
পরে দিয়ে দিল।কিন্তু
বিষয়টাকে তেমন পাত্তা দিলামনা।
কিছুদিন পরে লক্ষ করলাম
যে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে জল
আসতে লাগল।প্রথম প্রথম রিসিভ
না করলেও পরে একদিন রিসিভ করলাম।
কিছু বলার আগেই অনেক খারাপ
কথা বলে দিলাম।পরে লক্ষ করলাম
ফোনের ঐ পাশ থেকে কান্নার
আওয়াজ।কেমন যেন একটা সহানুভূতির
সৃষ্টি হল মনে।কথা বলতে লাগলাম। আর
আমার বিষয়টা জন্য নিজেকে কেমন
অপরাধি ভাবতে লাগলাম।এর পর
থেকেই ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম।
আস্তে আস্তে কথা বলার
সম্পর্কটা অনেক দুরে এগিয়ে গেল।
একদিক থেকে ভালবেসেই
ফেলেছিলাম।কিন্তু ফোনের ঐ পাশের
মানুষটার পরিচয় নেবার চেষ্টা কখনই
করিনি।
একদিন ওকে পড়াতে গেছি ও আমায়
জিজ্ঞেশ করল
যে আমি কাওকে ভালবাসি কিনা।এমন
প্রস্নে আমি বেশ বিব্রত বোধ করছিলাম।
ওকে পড়ার কথা বললাম।কিন্তু ও নারাজ।
যার কারনে বলেই দিলাম
যে ভালবাসি।ও জানতে চাইল
যে কাকে?বললাম যে সবকথাই
কে তোমাকে বলতে হবে নাকি?ও
হঠাত কান্না করতে লাগল আর বলল
যে আমার ফোনটা রিসিভ
করতে সাথে বলল যে ফোনটা ওই
করেছে।আমি তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে গেলাম।কথা না বলে চলে আসলাম।
অনেক ভাবার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম
যে এটা অসম্ভব।কার আমরা গরিব
হতে পারি কিন্তু তাই বলে যার নূণ খাই
তার ক্ষতি করতে পারবনা।এরপরে সেই
রাতেই বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম
বাড়ির উদ্দেশ্যএ।রাত বারোটা।
ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি।হঠাত
দেখি আমিনুল ভাইএর নাম্বার
থেকে ফোন এসেছে রিসিভ করতেই
যা শুনলাম
"অভ্র নিলন্তী পিল খেয়েছে।
একটা চিঠিও লিখেছিল।আমি সব
পড়েছি।এখন ও মৃত্যুর
সাথে পাঞ্জা লড়ছে।তুমি এস"।
সাথে সাথে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি ও শুয়ে আছে।আমি যাবার
পরে দেখি ও অন্য দিকে মুখ
করে শুয়ে আছে।আমি যাবার পরে
সবাই সরে গেল।ওর কাছে যাবার পরে ও
আমায় দেখে বাচ্চাদের মত কেদে উঠল।
আর আমাকে জড়িয়ে ধরল।নিজেকে আরর
ধরে রাখতে পারলামনা। বুকের
ভিতরকার উষ্ণ ভালবাসার পরস
দিয়ে ওকে টেনে নিলাম
এর পরে ওকে ছেড়ে আরর
যেতে পারিনি।)
=এই কি ব্যাপার তুমি এখন কি ভাবছ?
:ও তুমি....তোমার কথা ই ভাবছিলাম।
=অত ভেবে লাভ নেই।চল সবাই
নিচে অপেক্ষা করছে।
ওকে আসছি বলে পাঠিয়ে দিলাম।আজ
আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।
মনে মনে খুব হাসিও পাচ্ছে।এখনও
পাগলীটা সেই বাচ্চাদের মতই আছে।
সেই প্রাইভেট পড়ানোর সময় ওর দায়িত্ব
নিয়েছিলাম আজও সেই দায়িত্ব পালন
করি।অবশ্য এই কাজটা করতে ভালই
লাগে...
----------------------
_______ শেষ সন্ধ্যার কবি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন