সম্পর্ক
চোখে কালসিটে। চোয়ালে আইসব্যাগ। কৌশিকের ইন্টারভিউটা দেখছে সুমি।
- কৌশিকবাবু, পক্ষাঘাতে বাকশক্তি হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আপনার যে আবিষ্কার, তা নিয়ে এদেশে ফিরলেন কেন?
স্মৃতির ঢেউয়ে সুমির মনে পড়ে দীর্ঘকাল কৌশিকের পঙ্গু বাবা ছেলের পরের পর সাফল্যে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেন। মনে পড়ে, কৌশিকের মা সুমিকে জড়িয়ে কাঁদছেন, যেদিন উনি চলে গেলেন। কৌশিক আসতে পারল না।
আসল না সেদিনও যেদিন প্রতাপের সাথে সাত পাকে বাঁধা পড়ল সে।
ওদিকে মেয়েটার গলা, এখনো বিয়ে করেন নি। কেন, জানতে পারি?
বারো বছর পরও কি ওকে চিনতে পারবে কৌশিক?
সেদিন রাতে আবার প্রতাপের উন্মত্ত চিৎকার। অশ্রাব্য গালাগালি। কোনোদিন বাধা দেয় নি সুমি, পড়ে পড়ে মার খেয়েছে। আজ রুখে দাঁড়ায়। দুহাতে ওর গলা টিপে ধরে আছে প্রতাপ, ওর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, হঠাৎ কপাল চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রতাপ।
সুমির শোওয়ার ঘরে প্রতাপের পঙ্গু শরীরটা থেকে রকমারি সব তার আর নল একটি মেশিনের সাথে যুক্ত। সুমি ঢুকতেই একটি যান্ত্রিক স্বর, সেই পুরোনো বিরক্তি। এতক্ষণ কোথায় ছিলে? বর পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, আর উনি পাড়া বেড়াচ্ছেন! নির্লজ্জ মেয়েছেলে! ! সুমি ডায়াপার পালটায়। প্রতাপের শাপশাপান্ত চলতে থাকে। তোমার নিস্তার নেই সুমি। আমি তোমায় অত সহজে ছাড়ব না। সুমি, একটু ছোঁও না আমাকে, ওইখানে। কি হল, ঘেন্না! স্বামীর শরীর ছুঁতে ঘেন্না! এখন কি ওই ডাক্তারের সাথে শুচ্ছিস? হারামজাদী, বেশ্যা মাগী, তোর মুক্তি নেই ---
সুমি দুহাতে কান চেপে বেরিয়ে আসে।
- আর পারছি না কৌশিক।
- সুমি, চলে এস। ও যা করেছে তারপর কেন পড়ে আছ ---! তুমি জান ও দুদিনও বাঁচবে না যদি তুমি শুধু ---।
- না, কৌশিক; অত সহজে না।
ইলেকট্রিক চুল্লিতে প্রতাপের শরীরটা ছাই হয়ে গেল। সবাই বলেছে এমন সতীসাধ্বী স্ত্রী আজকের দিনে সত্যিই বিরল।
একটি চৌকোন কাঁচের বাক্সে ভাসমান একটি মানুষের মস্তিষ্ক। অনেকগুলো তার বেরিয়ে একটি মেশিনের সাথে যুক্ত। সুমি ঢুকতেই সেই বহুপরিচিত যান্ত্রিক স্বর ভেসে আসে।
- সুমি, তুমি এসেছ! তুমি, তুমি ১৮ ঘন্টা আসনি জান! আমি, আমি পাগল হয়ে যাব। আমার আর কিচ্ছু চাই না। দুটো কথা বল, প্লীজ! কতদিন তোমার গলা শুনিনি। সুমি, সুমি, আমায় মুক্তি দাও! আমি তোমায় পায়ে ধরছি। তুমি আমায় এবার যেতে দাও। আর পারছি না আমি।
খিলখিল করে হেসে ওঠে সুমি।
- তুমি আমায় পায়ে ধরবে? ধর! ধর! কেন, পারছ না? আমার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে না? ইচ্ছে করছে না আমায় মাটিতে ফেলে তোমার পৌরুষের প্রমাণ দিতে! চুপ কর! নাহলে কথা বলার ক্ষমতাটাও কেড়ে নেব। না প্রতাপ! তোমার এত সহজে মুক্তি নেই! কৌশিক বলেছে, এখনও তুমি অনেকদিন বাঁচবে। আমি, আমি কি অত সহজে তোমায় মরতে দিতে পারি! তোমার আমার যে সাত জনমের সম্পর্কচ
লিখাঃশেষ সন্ধ্যার কবি
চোখে কালসিটে। চোয়ালে আইসব্যাগ। কৌশিকের ইন্টারভিউটা দেখছে সুমি।
- কৌশিকবাবু, পক্ষাঘাতে বাকশক্তি হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আপনার যে আবিষ্কার, তা নিয়ে এদেশে ফিরলেন কেন?
স্মৃতির ঢেউয়ে সুমির মনে পড়ে দীর্ঘকাল কৌশিকের পঙ্গু বাবা ছেলের পরের পর সাফল্যে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেন। মনে পড়ে, কৌশিকের মা সুমিকে জড়িয়ে কাঁদছেন, যেদিন উনি চলে গেলেন। কৌশিক আসতে পারল না।
আসল না সেদিনও যেদিন প্রতাপের সাথে সাত পাকে বাঁধা পড়ল সে।
ওদিকে মেয়েটার গলা, এখনো বিয়ে করেন নি। কেন, জানতে পারি?
বারো বছর পরও কি ওকে চিনতে পারবে কৌশিক?
সেদিন রাতে আবার প্রতাপের উন্মত্ত চিৎকার। অশ্রাব্য গালাগালি। কোনোদিন বাধা দেয় নি সুমি, পড়ে পড়ে মার খেয়েছে। আজ রুখে দাঁড়ায়। দুহাতে ওর গলা টিপে ধরে আছে প্রতাপ, ওর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, হঠাৎ কপাল চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রতাপ।
সুমির শোওয়ার ঘরে প্রতাপের পঙ্গু শরীরটা থেকে রকমারি সব তার আর নল একটি মেশিনের সাথে যুক্ত। সুমি ঢুকতেই একটি যান্ত্রিক স্বর, সেই পুরোনো বিরক্তি। এতক্ষণ কোথায় ছিলে? বর পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, আর উনি পাড়া বেড়াচ্ছেন! নির্লজ্জ মেয়েছেলে! ! সুমি ডায়াপার পালটায়। প্রতাপের শাপশাপান্ত চলতে থাকে। তোমার নিস্তার নেই সুমি। আমি তোমায় অত সহজে ছাড়ব না। সুমি, একটু ছোঁও না আমাকে, ওইখানে। কি হল, ঘেন্না! স্বামীর শরীর ছুঁতে ঘেন্না! এখন কি ওই ডাক্তারের সাথে শুচ্ছিস? হারামজাদী, বেশ্যা মাগী, তোর মুক্তি নেই ---
সুমি দুহাতে কান চেপে বেরিয়ে আসে।
- আর পারছি না কৌশিক।
- সুমি, চলে এস। ও যা করেছে তারপর কেন পড়ে আছ ---! তুমি জান ও দুদিনও বাঁচবে না যদি তুমি শুধু ---।
- না, কৌশিক; অত সহজে না।
ইলেকট্রিক চুল্লিতে প্রতাপের শরীরটা ছাই হয়ে গেল। সবাই বলেছে এমন সতীসাধ্বী স্ত্রী আজকের দিনে সত্যিই বিরল।
একটি চৌকোন কাঁচের বাক্সে ভাসমান একটি মানুষের মস্তিষ্ক। অনেকগুলো তার বেরিয়ে একটি মেশিনের সাথে যুক্ত। সুমি ঢুকতেই সেই বহুপরিচিত যান্ত্রিক স্বর ভেসে আসে।
- সুমি, তুমি এসেছ! তুমি, তুমি ১৮ ঘন্টা আসনি জান! আমি, আমি পাগল হয়ে যাব। আমার আর কিচ্ছু চাই না। দুটো কথা বল, প্লীজ! কতদিন তোমার গলা শুনিনি। সুমি, সুমি, আমায় মুক্তি দাও! আমি তোমায় পায়ে ধরছি। তুমি আমায় এবার যেতে দাও। আর পারছি না আমি।
খিলখিল করে হেসে ওঠে সুমি।
- তুমি আমায় পায়ে ধরবে? ধর! ধর! কেন, পারছ না? আমার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে না? ইচ্ছে করছে না আমায় মাটিতে ফেলে তোমার পৌরুষের প্রমাণ দিতে! চুপ কর! নাহলে কথা বলার ক্ষমতাটাও কেড়ে নেব। না প্রতাপ! তোমার এত সহজে মুক্তি নেই! কৌশিক বলেছে, এখনও তুমি অনেকদিন বাঁচবে। আমি, আমি কি অত সহজে তোমায় মরতে দিতে পারি! তোমার আমার যে সাত জনমের সম্পর্কচ
লিখাঃশেষ সন্ধ্যার কবি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন