- এখনই তোমার বন্ধু আবিরকে মেসেজ করো ।লিখো
যে...
"দোস্ত আমি আর কোন দিন সিগারেট খাবো না ।"
ফোনটা পকেট থেকে বের করে এক দৃষ্টিতে
তানজীমের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আমার
সাথে ও হয়তো মজা করছে ।তাই ওর কথা পাত্তা না
দিয়ে আমি আরও গভীর ভাবে এক দৃষ্টিতে তার
ফুরফুরে চুলে বাতাসের খেলা দেখতে লাগলাম ।
বলে রাখি ওর চোখের দিকে তাকাতে আমি এখনো
লজ্জা পাই ।একটু লাজুক কিনা তাই ।
- [ধমক দিয়ে] কি হলো এভাবে ষাঁড়ের মতন তাকিয়ে
আছো ক্যান?লিখো বলছি ।
তারপর আমি গাধার মতন টাইপ করতে থাকলাম
"Dost ami konodin r biri khabo na."
- লিখছো ?
- হ্যাঁ লিখেছি ।
- কই দেখি ?
চেক করার পরে বললো আরো লিখো যে
"তোর সাথে যতক্ষন থাকবো তুই আমাকে আর সিগারেট
খাওয়ার কথা বলবি না "
বাধ্য ছেলের মতন আবার লিখলাম
"Tor sathe joto khon thakbo tui amake ar biri khawar kotha
bolbi na"
- লিখছো ?
- হ্যাঁ ।
- এবার সেন্ড করো আর ডেলিভারী রির্পোট আমাকে
দেখাও ।মোবাইলটা আমার হাতে দাও ।তোমাকে
বিশ্বাস নাই ।তুমি যে আমার চেয়ে সিগারেটকে
বেশী ভালবাসো সেটা আমি জানি ।
মনে মনে বললাম, হে বালিকা হে সুন্দরী, তুমি কি
জানো আমি ক্যান সিগারেট ছাড়ি না ? কারন "তুমি
আমাকে ছ্যাকা দিবা কিন্তু এই সিগারেট আমাকে
কখনোই ছ্যাকা দিবে না "
- কই কি ভাবছো ফোনটা চাইলাম দাও ।
- [চমকে উঠে] এইযে এইযে নাও নাও দেখো দেখো ।
তানজীম মেসেজের ডেলিভারী অপশনে গিয়ে দেখলো
যে মেসেজটা ডেলিভারী হয়েছে ।
- বিশ্বাস হয়েছেতো এবার ফোনটা দাও ।
আমি ও কে একথা বলতেই ও বলে উঠলো
- ইভা কে?
- মীম কে?
- ফারিয়া কে?
- কাজল কে?
ইতিমধ্যে আমার গলার পানি শুকিয়ে হাটুর নিচে চলে
গেছে ।
আমি বল্লাম কেও না কেউ না ওরা সবই আমার বোন ।
তুমিতো জানো পৃথিবীর সব মেয়ে মানুষই আমার বোন
।তুমি যদি চাও তোমাকেও আমি বোন ডাকতে পারি ।
লাস্টের কথাটা ফুট করে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে ।
-ফাজলামি করস তুই আমার সাথে ।তুই যা আমার
চোখের সামনে থেকে ।কুত্তা, বেয়াদব, আদা, রসুন,
পেয়াজ, লবন, ছাগাল, ভেড়া ইত্যাদি ইত্যাদি ।
তুমি থেকে যেহেতু তুই এ নেমে আসছে তখনই বুঝলাম
আমার কপালে আজ খারাপ আছে ।
বেইলী রোডের কেএফসি তে বসেছিলাম আমরা ।কত শখ
ছিল এক সাথে বসে আজ একটু মিষ্টি মধুর ভালবাসার
গল্প করবো ।কিন্তু আমার আশার মুখে ছাই দিয়ে বের
হয়ে যাচ্ছে তানজীম ।আর আমি ওর পিছন পিছন সরি
সরি বলতে বলতে ছুটছি ।
ওয়েটাররা আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ।
মনে হচ্ছে ওরা যাত্রা পালা দেখতেছে ।ঢোলের
তালে তালে নায়িকার প্রস্হান আর নায়কের
নায়িকাকে না পাওয়ার আহাজারি আরকি ।
কেএফসির নিচে এসে দাড়ালাম ।তানজীম সোজা হেটে
চলে যাচ্ছে আর আমি সে পানে তাকিয়ে আছি ।
মেয়েটা কত সুন্দর করে হাটে দেখছো ।আহা মধু মধু ।
আসলে সুন্দরী মেয়েরা যাই করে তাইই সুন্দর লাগে ।
- তারা রাগ করলে সুন্দর লাগে ।
- হাসলে সুন্দর লাগে ।
- কাদলে সুন্দর লাগে ।
- চড় মারলে সুন্দর লাগে ।
- এমনকি হাগু করতে লাগলেও সুন্দর লাগে ।সরি সরি
লাস্টের কথাটা মুখ দিয়ে ফট করে বের হয়ে গেছে ।
যাই হোক তানজীমের চলে যাওয়া দেখে মনে হয়ে গেল
কবির সেই বিখ্যাত বানী ।কবি বলেছিলেন যে_
"চলে যাওয়া গার্লফ্রেন্ড আর চলে যাওয়া ঢাকা
শহরের বাসের পিছনে কখনো ছুটো না কারন সেটা
একটা চলে গেলে আরেকটা আসবে "
কবির নামটা ঠিক এসময় মনে করতে পারছি না ।
হুদাই মনে করার ব্যার্থ চেষ্টা করে লাভ নেই ।
দূর থেকে দেখলাম মেয়েটা রিক্সা ঠিক করছে ।
রিক্সাওয়ালারা মেবি ভাড়া বেশী চাচ্ছে না হয়
যেতে চাচ্ছে না ।ওর চোখে মুখে হতাশার চিন্হ
দেখলাম ।
হঠাত কেন জানি তানজীমকে দেখে আমার বুকের বাম
পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো ।ভাবলাম, না
একে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না ।একে আমার চাইই
চাই ।তাই তানজীমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম ।
কাছে যেতে না যেতেই ও রিক্সায় উঠে বসলো ।আমিও
আরেকটা রিক্সা ভাড়া করে সামনের রিক্সা কে
ফলো করতে বল্লাম ।
ওমনি রিক্সাওয়ালা তার পান খাওয়া লাল ৩২ টা দাত
বের করে বললো
- হে হে হে ।মামা, মামী রাগ করছে নাকি ?
- হুম ।
- ২০ টাকা বাড়ায় দিয়েন ।
- এতে আমার লাভ ?
- এইযে মামীরে ফলো করতে করতে যাব ।
মনটা চাইলো যে রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে তার
রিক্সার সামনের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেই ।যাই হোক
সেটা না করে অনেক কষ্ট করে মেয়েটার বাড়ির নিচে
গিয়ে পৌছালাম ।হ্যাঁ রিক্সাওয়ালাকে ৬০ টাকার
ভাড়া ৮০ টাকাই দিলাম ।
ওখানে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ তানজীমের বাড়ির
দাড়োয়ান ।ধরুন নাম তার আক্কাস ।তিনি আমার
দিকে তার চোখ ৬০,১২০ ও ১৮০ ডিগ্রী কোণ করে বার
বার তাকাচ্ছে ।মনে হচ্ছে ছেলে মানুষ জীবনে দেখে
নি ।
আর PK মুভিতে ডান্সিং কার যেমনে সুন্দর করে
লাফাচ্ছিল তেমনি তানজীমের বাসার পাশের
ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের দোকানদারের চোখও
আমার দিকে তাকিয়ে ওমন করে লাফাচ্ছিল ।মনে
হচ্ছে এই বাসার সামনে কেউ কোন দিন কোন ছেলেকে
দেখে নি ।
আর অন্যান্য ফ্লাটের আন্টিদের কথা বা নাই
বল্লাম ।তারা বেলকুনিতে এসে এমন ভাবে লুক
দিচ্ছে যেন মনে হচ্ছে আমি একজন ফকির হয়ে তার
মেয়েদের এক সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি, আর
বিয়ের যৌতুক হিসেবে তাদের কিডনী চেয়েছি ।
কি আর করার ।সবার সব কিছু উপেক্ষা করেই দাড়িয়ে
রইলাম রোদের মধ্যে ।সময় যায় মেয়েটাতো
বেলকুনেতে আসে না আর ফেসবুকেও আসছে না ।
উনাকে আবার সরাসরি ফোন দেওয়া বারন পিচ্চি
মেয়েতো এখনো ফোন ইউজ করে না
হটাত মেসেজ ।
- কই তুমি?
-তোমার বাসার নিচে ।
মিথ্যা বলার জায়গা পাও না ।কই দেখছি নাতো
তোমাকে ।
[তার মানে ও আমাকে খুজতেছে ।মানে মানে মেসেজ
গুলো দেখে ভালবাসা কমে নি ।ব্রেক আপ তাহলে আর
করবে না ।শান্তি শান্তি ।আমার ঠোঁটের কোনে
হাসি জেগে উঠলো]
আমি হাত নাড়লাম ও আমাকে দেখলো ।তারপর এইযে
রুমে ঢুকলো আর বের হয় না ফেসবুকেও আসেনা
বেলকুনিতেও আসে না ফোনেও ট্রাই করতে পারছি না
বাসা থেকে বেরও হচ্ছে না ।কি করি কি করি ।
ইতিমধ্যে আকাশ কালো হয়ে এসেছে মানে বৃষ্টি হবে
।দুই এক ফোটা পড়তেও শুরু করেছে দেখলাম ।তাও
আমি ওখানেই ঠাই দাডিয়ে থাকলাম ।
একটু পরেই দেখলাম লাল ড্রেস পরা একটা মেয়ে
তানজীমদের বাসার গেট দিয়ে বের হয়ে এগিয়ে আসছে
।ওমা এ দেখি তানজীম আমি চিনতেই পারছি না ।
মেয়েটাকে কি সুন্দর ই না লাগছে ।
কাছে এসে রাগান্বিত স্বরে আমাকে বললো সামনে
আমার চাচার বাসায় আমাকে এগিয়ে দিয়ে এসো ।
চাচার বাসা খুব বেশি দুরে না ।হেটে গেলে দশ পনের
মিনিট লাগবে ।একটা ছাতা নিয়ে আমি আর তানজীম
হাটতে লাগলাম বৃষ্টির ভিতর । একটু দুরে গেছি তখনই
একটা বাতাসের ঝটকা এল । এতো জোড়ে যে আমার হাত
থেকে ছাতা উড়ে গেল ।
মাথার উপর থেকে ছাতা সরে যেতেই যেটুকু ভিজতে
বাকি ছিল সেটুকুও ভিজে গেল ।
তানজীম আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবার
আগেই আমি বললাম
- দেখ । আমি কিছু করি নাই ।ঐ মেসেজ গুলা দেড় দুই
মাস আগের আর ঐখানে আমার বাসার বড় ভাইদেরও
কিছু মেসেজ আছে যেগুলো ভাইয়াদের ফোনে টাকা
না থাকার কারনে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের
পাঠিয়েছিল ।
- ঐ জন্যইতো আজকে তোমায় ছেড়ে দিলাম ।নইলে ...
এই কথা শুনে আমি ছাতার পিছনে দৌড় দিলাম । ছাতা
এনে দেখি তানজীম দুই হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে ।
ওর মুখে একটা নমনীয় ভাব । আমি কাছে এসে ছাতা
মেলতে গেলে ও বলল ওটার আর দরকার নাই । চল । আমি
ছাতা বন্ধ করে তানজীমের পাশে হাটতে লাগলাম ।
কি চমত্কার একটা সময় !
চারিদিকে বৃষ্টি পড়ছে । আমি আর তানজীম
পাশাপাশি হাটছি । যে কোন প্রেমিক প্রেমিকার
জন্যই এটা একটা স্মরনীও মুহুর্ত !
এখন কেবল তানজীমের হাতটা ধরতে পারলেই হল ।
আমি আমার সেন্ডেল খুলে হাতে নিলাম ।তানজীমও
তাই করলো । সেন্ডেল আর ছাতাটা একই
হাতে নিলাম যাতে করে অন্য
হাতটা ফাঁকা থাকে ওর হাত ধরার জন্য ।ওকে হাত
ধরতে বলবো কিনা ভাবছি ঠিক এই সময়েই ও আমার হাত
ধরলো ।
ঠান্ডা বৃষ্টির পানিতে একটু একটু কাঁপছিলাম।
তানজীমের হাতটা ধরে বুকের ভিতরেও ঠিক একই
রকম কাঁপন অনুভব করতে শুরু করলাম ।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছেই । আমার সেদিকে আর খেয়াল নেই
। আমি তানজীমের হাত ধরে হাটছি ।
কেন জানি পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে
নিজেকে ।
"লিখাটি ৮২ % সত্যি ও ১৮% কল্পনার সমন্বয় ।কথা
হলো গিয়ে কোন মেয়ে বা ছেলে যদি আপনাকে
সত্যিই ভালবাসে আর তখন যদি সে আপনার কোন ভুল
পায় বা আপনি কোন অপরাধ করেন তখন সে আপনাকে
ছেড়ে যাওয়ার কারন হিসেবে ঐটা দেখাবে না আপনার
সাথে থাকার জন্য আপনাকে আর বেশী ভালবাসার
জন্য অন্য কারন খুজবে ।আর সে যদি তা না করে
তাহলে বুঝবেন আপনার ভালবাসায় ঘাটতি ছিল
বিশ্বাস ছিল না ।আপনি সেটা তার মধ্যে সৃষ্টি
করতে ব্যার্থ হয়েছেন ।"
-
-
লিখা --শেষ সন্ধ্যার কবি
যে...
"দোস্ত আমি আর কোন দিন সিগারেট খাবো না ।"
ফোনটা পকেট থেকে বের করে এক দৃষ্টিতে
তানজীমের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আমার
সাথে ও হয়তো মজা করছে ।তাই ওর কথা পাত্তা না
দিয়ে আমি আরও গভীর ভাবে এক দৃষ্টিতে তার
ফুরফুরে চুলে বাতাসের খেলা দেখতে লাগলাম ।
বলে রাখি ওর চোখের দিকে তাকাতে আমি এখনো
লজ্জা পাই ।একটু লাজুক কিনা তাই ।
- [ধমক দিয়ে] কি হলো এভাবে ষাঁড়ের মতন তাকিয়ে
আছো ক্যান?লিখো বলছি ।
তারপর আমি গাধার মতন টাইপ করতে থাকলাম
"Dost ami konodin r biri khabo na."
- লিখছো ?
- হ্যাঁ লিখেছি ।
- কই দেখি ?
চেক করার পরে বললো আরো লিখো যে
"তোর সাথে যতক্ষন থাকবো তুই আমাকে আর সিগারেট
খাওয়ার কথা বলবি না "
বাধ্য ছেলের মতন আবার লিখলাম
"Tor sathe joto khon thakbo tui amake ar biri khawar kotha
bolbi na"
- লিখছো ?
- হ্যাঁ ।
- এবার সেন্ড করো আর ডেলিভারী রির্পোট আমাকে
দেখাও ।মোবাইলটা আমার হাতে দাও ।তোমাকে
বিশ্বাস নাই ।তুমি যে আমার চেয়ে সিগারেটকে
বেশী ভালবাসো সেটা আমি জানি ।
মনে মনে বললাম, হে বালিকা হে সুন্দরী, তুমি কি
জানো আমি ক্যান সিগারেট ছাড়ি না ? কারন "তুমি
আমাকে ছ্যাকা দিবা কিন্তু এই সিগারেট আমাকে
কখনোই ছ্যাকা দিবে না "
- কই কি ভাবছো ফোনটা চাইলাম দাও ।
- [চমকে উঠে] এইযে এইযে নাও নাও দেখো দেখো ।
তানজীম মেসেজের ডেলিভারী অপশনে গিয়ে দেখলো
যে মেসেজটা ডেলিভারী হয়েছে ।
- বিশ্বাস হয়েছেতো এবার ফোনটা দাও ।
আমি ও কে একথা বলতেই ও বলে উঠলো
- ইভা কে?
- মীম কে?
- ফারিয়া কে?
- কাজল কে?
ইতিমধ্যে আমার গলার পানি শুকিয়ে হাটুর নিচে চলে
গেছে ।
আমি বল্লাম কেও না কেউ না ওরা সবই আমার বোন ।
তুমিতো জানো পৃথিবীর সব মেয়ে মানুষই আমার বোন
।তুমি যদি চাও তোমাকেও আমি বোন ডাকতে পারি ।
লাস্টের কথাটা ফুট করে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে ।
-ফাজলামি করস তুই আমার সাথে ।তুই যা আমার
চোখের সামনে থেকে ।কুত্তা, বেয়াদব, আদা, রসুন,
পেয়াজ, লবন, ছাগাল, ভেড়া ইত্যাদি ইত্যাদি ।
তুমি থেকে যেহেতু তুই এ নেমে আসছে তখনই বুঝলাম
আমার কপালে আজ খারাপ আছে ।
বেইলী রোডের কেএফসি তে বসেছিলাম আমরা ।কত শখ
ছিল এক সাথে বসে আজ একটু মিষ্টি মধুর ভালবাসার
গল্প করবো ।কিন্তু আমার আশার মুখে ছাই দিয়ে বের
হয়ে যাচ্ছে তানজীম ।আর আমি ওর পিছন পিছন সরি
সরি বলতে বলতে ছুটছি ।
ওয়েটাররা আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ।
মনে হচ্ছে ওরা যাত্রা পালা দেখতেছে ।ঢোলের
তালে তালে নায়িকার প্রস্হান আর নায়কের
নায়িকাকে না পাওয়ার আহাজারি আরকি ।
কেএফসির নিচে এসে দাড়ালাম ।তানজীম সোজা হেটে
চলে যাচ্ছে আর আমি সে পানে তাকিয়ে আছি ।
মেয়েটা কত সুন্দর করে হাটে দেখছো ।আহা মধু মধু ।
আসলে সুন্দরী মেয়েরা যাই করে তাইই সুন্দর লাগে ।
- তারা রাগ করলে সুন্দর লাগে ।
- হাসলে সুন্দর লাগে ।
- কাদলে সুন্দর লাগে ।
- চড় মারলে সুন্দর লাগে ।
- এমনকি হাগু করতে লাগলেও সুন্দর লাগে ।সরি সরি
লাস্টের কথাটা মুখ দিয়ে ফট করে বের হয়ে গেছে ।
যাই হোক তানজীমের চলে যাওয়া দেখে মনে হয়ে গেল
কবির সেই বিখ্যাত বানী ।কবি বলেছিলেন যে_
"চলে যাওয়া গার্লফ্রেন্ড আর চলে যাওয়া ঢাকা
শহরের বাসের পিছনে কখনো ছুটো না কারন সেটা
একটা চলে গেলে আরেকটা আসবে "
কবির নামটা ঠিক এসময় মনে করতে পারছি না ।
হুদাই মনে করার ব্যার্থ চেষ্টা করে লাভ নেই ।
দূর থেকে দেখলাম মেয়েটা রিক্সা ঠিক করছে ।
রিক্সাওয়ালারা মেবি ভাড়া বেশী চাচ্ছে না হয়
যেতে চাচ্ছে না ।ওর চোখে মুখে হতাশার চিন্হ
দেখলাম ।
হঠাত কেন জানি তানজীমকে দেখে আমার বুকের বাম
পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো ।ভাবলাম, না
একে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না ।একে আমার চাইই
চাই ।তাই তানজীমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম ।
কাছে যেতে না যেতেই ও রিক্সায় উঠে বসলো ।আমিও
আরেকটা রিক্সা ভাড়া করে সামনের রিক্সা কে
ফলো করতে বল্লাম ।
ওমনি রিক্সাওয়ালা তার পান খাওয়া লাল ৩২ টা দাত
বের করে বললো
- হে হে হে ।মামা, মামী রাগ করছে নাকি ?
- হুম ।
- ২০ টাকা বাড়ায় দিয়েন ।
- এতে আমার লাভ ?
- এইযে মামীরে ফলো করতে করতে যাব ।
মনটা চাইলো যে রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে তার
রিক্সার সামনের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেই ।যাই হোক
সেটা না করে অনেক কষ্ট করে মেয়েটার বাড়ির নিচে
গিয়ে পৌছালাম ।হ্যাঁ রিক্সাওয়ালাকে ৬০ টাকার
ভাড়া ৮০ টাকাই দিলাম ।
ওখানে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ তানজীমের বাড়ির
দাড়োয়ান ।ধরুন নাম তার আক্কাস ।তিনি আমার
দিকে তার চোখ ৬০,১২০ ও ১৮০ ডিগ্রী কোণ করে বার
বার তাকাচ্ছে ।মনে হচ্ছে ছেলে মানুষ জীবনে দেখে
নি ।
আর PK মুভিতে ডান্সিং কার যেমনে সুন্দর করে
লাফাচ্ছিল তেমনি তানজীমের বাসার পাশের
ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের দোকানদারের চোখও
আমার দিকে তাকিয়ে ওমন করে লাফাচ্ছিল ।মনে
হচ্ছে এই বাসার সামনে কেউ কোন দিন কোন ছেলেকে
দেখে নি ।
আর অন্যান্য ফ্লাটের আন্টিদের কথা বা নাই
বল্লাম ।তারা বেলকুনিতে এসে এমন ভাবে লুক
দিচ্ছে যেন মনে হচ্ছে আমি একজন ফকির হয়ে তার
মেয়েদের এক সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি, আর
বিয়ের যৌতুক হিসেবে তাদের কিডনী চেয়েছি ।
কি আর করার ।সবার সব কিছু উপেক্ষা করেই দাড়িয়ে
রইলাম রোদের মধ্যে ।সময় যায় মেয়েটাতো
বেলকুনেতে আসে না আর ফেসবুকেও আসছে না ।
উনাকে আবার সরাসরি ফোন দেওয়া বারন পিচ্চি
মেয়েতো এখনো ফোন ইউজ করে না
হটাত মেসেজ ।
- কই তুমি?
-তোমার বাসার নিচে ।
মিথ্যা বলার জায়গা পাও না ।কই দেখছি নাতো
তোমাকে ।
[তার মানে ও আমাকে খুজতেছে ।মানে মানে মেসেজ
গুলো দেখে ভালবাসা কমে নি ।ব্রেক আপ তাহলে আর
করবে না ।শান্তি শান্তি ।আমার ঠোঁটের কোনে
হাসি জেগে উঠলো]
আমি হাত নাড়লাম ও আমাকে দেখলো ।তারপর এইযে
রুমে ঢুকলো আর বের হয় না ফেসবুকেও আসেনা
বেলকুনিতেও আসে না ফোনেও ট্রাই করতে পারছি না
বাসা থেকে বেরও হচ্ছে না ।কি করি কি করি ।
ইতিমধ্যে আকাশ কালো হয়ে এসেছে মানে বৃষ্টি হবে
।দুই এক ফোটা পড়তেও শুরু করেছে দেখলাম ।তাও
আমি ওখানেই ঠাই দাডিয়ে থাকলাম ।
একটু পরেই দেখলাম লাল ড্রেস পরা একটা মেয়ে
তানজীমদের বাসার গেট দিয়ে বের হয়ে এগিয়ে আসছে
।ওমা এ দেখি তানজীম আমি চিনতেই পারছি না ।
মেয়েটাকে কি সুন্দর ই না লাগছে ।
কাছে এসে রাগান্বিত স্বরে আমাকে বললো সামনে
আমার চাচার বাসায় আমাকে এগিয়ে দিয়ে এসো ।
চাচার বাসা খুব বেশি দুরে না ।হেটে গেলে দশ পনের
মিনিট লাগবে ।একটা ছাতা নিয়ে আমি আর তানজীম
হাটতে লাগলাম বৃষ্টির ভিতর । একটু দুরে গেছি তখনই
একটা বাতাসের ঝটকা এল । এতো জোড়ে যে আমার হাত
থেকে ছাতা উড়ে গেল ।
মাথার উপর থেকে ছাতা সরে যেতেই যেটুকু ভিজতে
বাকি ছিল সেটুকুও ভিজে গেল ।
তানজীম আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবার
আগেই আমি বললাম
- দেখ । আমি কিছু করি নাই ।ঐ মেসেজ গুলা দেড় দুই
মাস আগের আর ঐখানে আমার বাসার বড় ভাইদেরও
কিছু মেসেজ আছে যেগুলো ভাইয়াদের ফোনে টাকা
না থাকার কারনে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের
পাঠিয়েছিল ।
- ঐ জন্যইতো আজকে তোমায় ছেড়ে দিলাম ।নইলে ...
এই কথা শুনে আমি ছাতার পিছনে দৌড় দিলাম । ছাতা
এনে দেখি তানজীম দুই হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে ।
ওর মুখে একটা নমনীয় ভাব । আমি কাছে এসে ছাতা
মেলতে গেলে ও বলল ওটার আর দরকার নাই । চল । আমি
ছাতা বন্ধ করে তানজীমের পাশে হাটতে লাগলাম ।
কি চমত্কার একটা সময় !
চারিদিকে বৃষ্টি পড়ছে । আমি আর তানজীম
পাশাপাশি হাটছি । যে কোন প্রেমিক প্রেমিকার
জন্যই এটা একটা স্মরনীও মুহুর্ত !
এখন কেবল তানজীমের হাতটা ধরতে পারলেই হল ।
আমি আমার সেন্ডেল খুলে হাতে নিলাম ।তানজীমও
তাই করলো । সেন্ডেল আর ছাতাটা একই
হাতে নিলাম যাতে করে অন্য
হাতটা ফাঁকা থাকে ওর হাত ধরার জন্য ।ওকে হাত
ধরতে বলবো কিনা ভাবছি ঠিক এই সময়েই ও আমার হাত
ধরলো ।
ঠান্ডা বৃষ্টির পানিতে একটু একটু কাঁপছিলাম।
তানজীমের হাতটা ধরে বুকের ভিতরেও ঠিক একই
রকম কাঁপন অনুভব করতে শুরু করলাম ।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছেই । আমার সেদিকে আর খেয়াল নেই
। আমি তানজীমের হাত ধরে হাটছি ।
কেন জানি পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে
নিজেকে ।
"লিখাটি ৮২ % সত্যি ও ১৮% কল্পনার সমন্বয় ।কথা
হলো গিয়ে কোন মেয়ে বা ছেলে যদি আপনাকে
সত্যিই ভালবাসে আর তখন যদি সে আপনার কোন ভুল
পায় বা আপনি কোন অপরাধ করেন তখন সে আপনাকে
ছেড়ে যাওয়ার কারন হিসেবে ঐটা দেখাবে না আপনার
সাথে থাকার জন্য আপনাকে আর বেশী ভালবাসার
জন্য অন্য কারন খুজবে ।আর সে যদি তা না করে
তাহলে বুঝবেন আপনার ভালবাসায় ঘাটতি ছিল
বিশ্বাস ছিল না ।আপনি সেটা তার মধ্যে সৃষ্টি
করতে ব্যার্থ হয়েছেন ।"
-
-
লিখা --শেষ সন্ধ্যার কবি