রবিবার, ১৭ মে, ২০১৫

শেষ প্রতীক্ষা
প্রতিদিন কিছু না কিছু কারণে বা অকারণে একই পথ দিয়ে
বারবার হেঁটে চলা।রাস্তার পাশ দিয়ে লম্বা মাপের গাছগুলোও
প্রতিদিন একইভাবে দুলে।গাছগুলোকে দেখে মনে হয় না তারা
খুব একটা খারাপ আছে।আরামেই পার করছে প্রতিক্ষণ।
আজ হঠাৎ সূর্যটা খুব তীক্ষ্ণ মেজাজে উঠেছে।গ্রীষ্মকাল বোধ হয়
প্রকৃতিতে হানা দিতে দোয়ারে পৌঁছেছে।প্রতিদিনের মত
আজও তন্ময় মেঠোপথ ধরে পিঁপড়া,বাঁশঝাড়,কাশবন এইসবের সাথে
মনোবাক করতে করতেই এগুচ্ছে।ও আপনাদের তো বলাই হয়নি
তন্ময় একটি মেয়েকে খুবই পছন্দ করে।তবে নাম,ঠিকানা সব
অজ্ঞাত।কিন্তু প্রতিদিন মেয়েটাকে এক পলক দেখবে বলে কি
রোদ,কি বৃষ্টি সব রকম প্রতিকূল আবহাওয়াকে আপন করে রাস্তার
মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।সাথে কয়েকজন বন্ধুর উপস্থিতিও দেখা
যায়।যার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকা সেজন আসলে তন্ময়
পালাবে না দাঁড়িয়ে থাকবে কঠিন দ্বিধায় পরে যায়।
পালানোর অপচেষ্টা করতেই এক ডজন বা এক হালি বন্ধুরা
দারোয়ানি কাজে ব্যস্ত হত।এর আগে তন্ময় ১০ ১০ বার
পালিয়েছে।এইবার আর নিস্তার নাই।তন্ময় এককথায় বাধ্য হয়ে
সাহসী ভাব নিয়ে মেয়েটির রাস্তার দিকে পা বাড়াল।অর্ধেক
রাস্তা না যেতেই তন্ময় পুনঃরায় পিছুহটল।কিন্তু বন্ধুদের
লাত্তি গুতা খাইয়া মাইয়াটার সামনে গিয়ে বন্ধুদের দিকে
তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে বলেছিল ঐখানে যে ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে
আছে এগুলা আপনাকে প্রতিদিন ডিস্টার্ভ করে তাই না
এগুলাকে আমি শায়েস্তা করতেছি।আপনি যান।আর বন্ধুরা
তন্ময়কে দৌঁড়াইয়া দৌঁড়াইয়া বলে যার জন্য চুরি করি সে বলে
কিনা চোর।
একটা সময় তন্ময় একটা একটা করে মেয়েটির সম্পর্কে সব
বায়োডাটা সংগ্রহ করে তাকে প্রপোজাল দিল।৫ মাসে মনে
হয় সাহস একটুখানি হয়েছে।মেয়েটির নাম ছিল ইমা।কিন্তু
ইমার ফিরতি জবাব আসল এখন তার প্রেম করার কোনো রকম ইচ্ছে
তার নেই। তন্ময় এবার চিন্তা করল এইসব মেয়েটেয়ে বাদ।
পৃথিবীতে কি একটাই মেয়ে নাকি ওর সাথে প্রেম করতে হবে।
১ মাস না যেতেই আবার সেই পুরনো কীর্তি।একটা কোচিং
সেন্টারে ইমা কোচিং করত।সেখানে তন্ময়ের বিশ্বস্ত বন্ধু
আবিরও পড়ত।আবিরই হল তখনকার প্রেম রোগ সারানোর একমাত্র
ঔষধ।ইমাও কিন্তু অজান্তেই তন্ময়ের প্রেমে পড়েছিল।কিন্তু
আবিরের কুক্রিয়া ইমার চোখে পড়তে লাগল।বেচারা বন্ধুর
প্রেমের জন্য কি না করেছিল কিন্তু বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে
এতবড় অপকার করে বসবে কেবা জানত।ঐদিকে কয়েকদিনের
ভিতর তন্ময় কতই না কুকর্ম সম্পাদন করেছিল তা শুধু কর্মগুলোই
জানে।যার ফলস্বরূপ ভোগ করেছিল অভাগা ইমা।একপর্যায়ে
পরিবারের কানে ঘটনা উন্মোচন হতেই ইমার যা হাল হয়েছিল
তা বলার রাখেনা।ঐদিকে তন্ময় পেয়েছিল ইমার ভিলেন
ভাইয়ের ধমক,কিছু নতুন টেনশন,আর কত গুলা সিগারেটের উচ্ছিষ্ট।
আজ বৈশাখী মেলা।তন্ময় প্রতিবারের মত এবারও যথারীথি
উপস্থিত।উপস্থিত প্রতিবারের মত একই হলেও মন মানসিকতা
কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে।এই মন এইবার ছুটে এসেছে একবার
ইমাকে দেখিবে বলে।পরিকল্পনা মাফিক দেখা হল কথাও হল।
ইমার মুখে শুধু একই ধ্বনি আপনি আমার অনেক ক্ষতি করেছেন আর
ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না।আর তন্ময়ের মুখে আরেক ধ্বনি
আমার কথাটা একবার শোন।বাড়ি ফিরতেই এইবার তন্ময়ের
ফাইনাল ডিসিশন যদি ও আমাকে সত্যিই ভালবাসে তাহলে
ফিরে আসবেই।
তন্ময়ের অপেক্ষার প্রহর গিয়ে পৌঁছল পাঁচ বছরের মাথায়।এর
ভিতর ইমার বিয়েও হয়ে গেল শিহাব নামের এক শিল্পপতীর
সাথে।তন্ময় এখনও জানেনা যে তার প্রিয়তমা এখন আরেক
এলাকার বাসিন্দা।শুধু এইটাই জানে একদিন সে আসবে।
স্বামীর ঘরে আছে ঠিক কিন্তু স্বামীর প্রেমঘরে ইমা নিজেকে
মানিয়ে নিতে পারেনি।উঠতে,বসতে,হাঁটতে শুধু তন্ময়ের কথা
মুখে যেন আঠার মত লেগে আছে।আজ অফিস বন্ধ।তাই অাজ
শিহাব সাহেব বাসায় আছে।শিহাব সাহেব বুক র্যাকের পাশ
দিয়ে হেঁটে যেতেই চোখ পড়ল র্যাকের নিচে একটা পুরনো
ডায়রির দিকে।ডায়রিটা নিয়ে শিহাব চলে গেল বেলকনির
পাশে।ডায়রির পাতা প্রায়ই ফুরিয়ে এসেছে আর কয়েকটা
পাতামাত্র।শিহাব সাহেব ধীরে ধীরে ডায়রির পাতায় চোখ
বুলাতে লাগল। যতই ডায়রির পাতাগুলো উল্টাচ্ছে শিহাব
সাহেবের চোখ ততই ঘোলা হয়ে আসছে।বেলকনির ফুলের টপে
পানি দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই ইমা তার ডায়রির লাল ফিতাটা
দেখল।ইমা দৌঁড়ে আসতেই তার স্বামীকেই দেখল ডায়রি
হাতে।ইমা ডায়রিটা স্বামীর কাছ থেকে চাইতেই শিহাব
সাহেব শুধু বলেছিল মানুষটা কে।আমার সাথে একটু দেখা করাই
দিবা।শিহাব সাহেব উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাদের মাঝে
খুঁটি হয়ে থাকলে নিজেকে সারাজীবন নিজের মনোকারাগারে
অপরাধী সেঁজেই থাকতে হবে।
কোনো এক গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে ইমা আর শিহাব সাহেব
ছুটে এলেন লতায়ঘেরা,ঘাসের চাদরে মোড়া তন্ময়ের গ্রামে।
তন্ময়ের সাথে দেখা করতে চাইলে জনৈক এক ব্যক্তি কাঁন্না
সুরে বলল সে আর আমাদের সাথে থাকেনা সে এখন উপরে থাকে
উপরে।

লেখক: শেষ সন্ধ্যার কবি ,

গল্পঃ পঙ্গু

গল্পঃ পঙ্গু
লেখাঃ শেষ সন্ধ্যার কবি .
নির্বাক তাকিয়ে আছে রিমন। নির্বাক বললে ভুল হবে, চোখ দুটো কিছু বলতে চাইছে। হয়তো মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরাতে চাইছে। রাস্তার সকল মানুষ গুলো আড়চোখে দেখছে তাকে। নিজেকে যে সে আজ অপমানিত ভাবার অধিকার টুকুও হারিয়ে ফেলেছে। বুকটা কষ্টের তাড়নায় বারবার ওঠানামা করছে। এত গুলো মানুষের মাঝে কি এক জন ও নেই তার হয়ে কথা বলার! আবারো বকাবকি শুরু করে সেই লোকটি -
---শালার হাত কাটা পাবলিক, যা পারিসনা তা করতে যাস কেন, হুম?
---আমি সাইকেল ভাল চালাতে পারি, কিন্তু দুর্ঘটনা তো যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। -নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দিল রিমন।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ভদ্র লোকের আরেকটি থাপ্পড় এসে লাগল রিমনের বাম গালে। এবার আর না কেঁদে পারল না রিমন। দুহাত জোড় করে যে ক্ষমা চাইবে সেই সাধ্যও যে তার নেই। বাম হাতে তার সাইকেল টা এখনো ধরা রয়েছে। কিন্তু ডান হাত? না সেটি তার নেই। বিধাতা কেড়ে নিয়েছে তার সে হাত। তাই আরো কিছুটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মুখেই উচ্চারণ করে রিমন--
---প্লিজ আমায় ক্ষমা করুন।
তখন যারা এই তামাশা দেখছিল তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলে উঠল --- থাক ভাই বাদ দেন। বেচারা পঙ্গু মানুষ। একটু এক্সিডেন্টই না হয় করে ফেলেছে।।
লোকটি রিমন কে ছেড়ে দিল। সাইকেলটা ঘুরিয়ে আবার বাড়ির পথ ধরে রিমন। চোখে তখনো জল ঝরছে। ভাবতে থাকে রিমন। সে কি খুব বড় অপরাধ করেছে? মোড় ঘুরতে গিয়ে লোকটি তার সাইকেলের সামনে এসে যায়। এক হাতে ভাল ভাবে সামলে উঠতে পারেনি রিমন। তাই তার সাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে লোকটি পড়ে যায়। দামি জামা কাপড়ে ধুলা ময়লা লাগে কিছুটা। কিন্তু তার তো কোথাও তেমন আঘাত লাগেনি বা কাটেনি। তারপরেও থাপ্পড় গুলো দেওয়া কি খুব দরকার ছিল? সাইকেল চালাচ্ছে সে। কিন্তু চোখের পানিটাও মুছতে পারছেনা।
বাসায় ফিরে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে রিমন। তার মা এসে জানতে চায় কি হয়েছে। কিছুই বলেনা সে। কিন্তু মুখের দাগ দেখে তার মা আৎকে উঠে বলে--
---বাবা কি হইছে তোর? মুখে দাগ কেন?
নিজেকে আর সামলাতে পারেনা রিমন। একহাতে যতটুকু পারে শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে--
--- মা আমি কি মানুষ নই? কেন সবাই এত অবহেলা করে? কেন কেউ মূল্য দেয়না? পঙ্গু বলে কি আমার কোন স্বপ্ন থাকতে নেই?
---এমন করে বলিস না বাবা। -রিমনের মায়ের কন্ঠ রোধ হয়ে আসে।
রিমনের মা জানে রিমন কেমন। ছোট বেলায় দুর্ঘটনায় ডান হাত হারায় রিমন। সেটি তার বাবা মায়ের অনেক বড় কষ্ট। রিমনের মা ভাবে, দুনিয়ার অনেক মানুষ আছে যারা কোন না কোন ভাবে প্রতিবন্ধী। হয়ত কারো হাত নেই, কারো পা, কারো চোখ। কেউ বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাই বলে কি তারা শুধুই কষ্ট আর অবহেলা পাবে? হোক সে জন্মগত বা দুর্ঘটনাবশত পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের দেহের মাঝেও তো একটা করে প্রাণ আছে।
রিমনের মায়ের রিমনের জন্য কোন লজ্জা নেই। কারন রিমন লেখা পড়া করে। রিমন এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যে অনেক কিছু পারে এটা তার গর্ব। কিন্তু সবাই কেন উৎসাহ দেয়না? শুধুই পিছু টেনে ধরতে চায়, সে পঙ্গু এই দোহাই দিয়ে।
নামাজ পড়ছে রিমন। সে নামজ ছাড়ে না। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে হাত ওঠায়---- হে আল্লাহ, আমি জানি তুমি দেখেছ আজ আমি কত কষ্ট পেয়েছি। তুমি আমাকে সেই তৌফিক দাওনি যে দুহাত জোড় করে তোমার কাছে কিছু চাইব। তাতেও আমার কোন দুঃখ নেই। আমি জানি পৃথিবীতে তোমার অনেক বান্দা রয়েছে যারা আমার মতই অসহায়। তুমি তাদের সব কষ্ট হতাশা গুলো আমাকে দাও কিন্তু আর কাউকে আমার মত ব্যথা পেতে দিওনা। আমার মত যারা পঙ্গু রয়েছে তারাতো তোমারই সৃষ্টি। কিন্তু যে সমস্ত মানুষ তোমার এই সৃষ্টি গুলোর দুর্বলতা নিয়ে উপহাস করে, তাদেরকে আঘাত করে, সেই সব মানুষ দের তুমি কোন দিন ক্ষমা করো না।
চোখের পানি মুছেই চলেছে রিমন। হ্যা, শুধু বাম হাত দিয়েই। সে জানেনা বাকি জিবনে আর কত বার খোদার কাছে নালিশ জানাতে হবে।

"কবরটার রহস্য"

"কবরটার রহস্য"

....এই কবরটাতে একটা রহস্য আছে।
মোড়ল বাড়ির গোরস্থানের সবার দক্ষিনে এই কবরটা। পারিবারিক কবরস্থান। তিন পুরুষ থেকে আজ অবধি এই বংশের মরহুমদের দাফন করা হয় এখানে।
গাছপালায় ঘেড়া এই কবরস্থানে সর্বশেষ দাফন করা হয় শ্রাবনীকে।
রহস্যটা এই কবরেই! তিন বছর আগে মারা যাওয়া মেয়েটা বাবার একমাত্র সন্তান ছিল। বিয়ের সাড়ে চৌদ্দ বছর পর জন্ম নেয় মেয়েটা। অঝোর বর্ষার শ্রাবন সন্ধ্যায় জন্ম নেয়া মেয়েটার নাম রাখা হয় শ্রাবনী।
শ্রাবনী নামটা বেশ দুঃখী দুঃখী টাইপের। নামের সাথে একফোটা দুঃখ মিশে যায়।
গত তিন বছর আগে শরতের রাতে মারা যায় শ্রাবনী। আকাশ ভরা তারার রাতে; এতো মুগ্ধ পৃৃথীবি ছেড়ে কেউ যেতে পারে? তারার রাতে বাবার মেয়েটা কেমন করে আকাশের তারা হয়ে গেল? আপনকে পর করে পরপারে চীরতরে কেমন করে যাওয়া সম্ভব হল?
মাঝে মাঝেই বিলাপ করে শ্রাবনীর বাবা। একরাশ পাগলের মত প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বিধাতার কাছে। স্থির দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে বাবা। কোন উত্তর আশে না। বিধাতা হয়তো হাসেন; অবাক হন পাগল বাবার পাগলামিতে।
ভার্সিটির ছাত্রী ছিল শ্রাবনী। শরতের এক বিকেলে হঠাৎ বাসায় আসে সে। ছুটি নেই; ক্লাস আছে ভার্সিটিতে। তবুও বাসায় কেন আসলো কেউ আন্দাজ করতে পারে নি।
বাবা অবাক হন নি। বাবা-মার টান যে ক্লাস পরীক্ষার টানের চেয়ে বেশি। সন্তান বাবার কাছে এসেছে; মায়ের কোলে ফিরেছে। ছুটি নাই তো কি? সন্তান ফিরবেই। অবাক হবার কিছু নেই।
বাহারী রান্না করা হল। রাতে মা ডাকলেন শ্রাবনীকে। খাবার টেবিলে এসে বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল মোয়েটা। হঠাৎ চোখটা ভিজে উঠছে। বাবা এবার অবাক হয়।
মায়ের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠে। খাবার টেবিলে হঠাৎ মেয়েটা অমন করছে কেন? হঠাৎ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে এল কেন? ও বিষন্ন কেন? কাঁদছে কেন?
বাবা বললেন; কি হয়েছে মা?
মা বলনেন; খুলে বল, কি হয়েছে?
মেয়েটা আবার বাবার দিকে চোখ তুলে তাকায়। মায়ের দিকে ফিরে। কোন উত্তর নেই। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে মেয়েটা।
আব্দার করে; মা-বাবার সাথে আজ ঘুমাবে। অত বড় মেয়ে এতো ছোট্ট মানুষের মত করছে কেন?
পাশাপাশি শুয়ে আছে তিনটা মানুষ। হঠাৎ ভোরে বাবা মায়ের মাঝে শুয়ে থাকা মেয়েটা চলে গেল। হাউমাউ করে উঠলো মা। বাবা এবার অবাক হলেন। সুর্য উঠা সকালে মোড়ল বাড়ির সুর্যটা ডুবে গেল।
কলিজার একটা অংশ ছিড়ে গেল।
বিকেলে দাফন করা হয় মেয়েটাকে। চোখের জলে বিদায় জানাতে হল। এটাই নিয়ম। বাবা সেদিন অনেকরাত পর্যন্ত গোরস্থানেই কবরটার পাশে বসে ছিলেন।
শ্রাবনীর জানাযায় একটা ছেলে এসেছিল। খুব কেঁদেছিল। কেউ চিনতে পারে নি ছেলেটাকে। বাবাও না। তবে এ নিয়ে উনি ভাবেন নি। মুসলমান হয়ে মুসলমানের জানাযায় আসবে। এটাই নিয়ম। কান্নাকাটি করবে, এটাও নিয়ম। অপরিচিত হতেই পারে! সবাই লক্ষ্য করে নি। মেয়েটার বাবা লক্ষ্য করেছে।
দিনটা গেল। রাতটাও গেল। সপ্তাহ।তারপর মাস।
তারপর...
চল্লিশ দিনের মাথায় গভীর রাতে একটা মানুষকে দেখা গেল কবরের কাছে! এবারো বাবা দেখলেন। সাদা পাঞ্জাবী পড়া একটা মানুষ। মাথায় টুপি। সেটাও সাদা।
গাছ পালায় ঘেড়া নির্জন কবরস্থানে এতো রাতে কে? তাও সাদা? বাবা এবারো অবাক হয়।
তবে ভয় পান নি। মেয়ের কবর; বংশের গোরস্থান! ভয় পাবার কি আছে?
আস্তে আস্তে কবরের কাছে যাচ্ছেন শ্রাবনীর বাবা। এর মধ্যেই মানুষটা নেই। লক্ষ্য করলেন মানুষটার দিকে। একটা বাইকে করে চলে গেল মানুষটা। বাইকের আলো দেখা যাচ্ছিল। শব্দও স্পষ্ট। ধীরে ধীরে শব্দটা নিশব্দ হয়ে গেল। মানুষটা চলে গেল।
ঘন আঁধার। সুনসান নীরবতা। একটা নিশাচর পাখি ডানা ঝাপ্টে কবরস্থান থেকে উড়ে গেল। ধীরে ধীরে কবরটার কাছে গেলেন শ্রাবনীর বাবা। একগুচ্ছ গোলাপ কবরের উপরে। তরতজা।
তিনি গোলাপ গুচ্ছ হাতে নিলেন। গুনে গুনে দেখলেন একুশটা গোলাপ। কবরটা কবরের মতই আছে। ভিতরে শুয়ে আছে কলিজার টুকরা। উপরে শ্রাবনীর বাবা; ছেড়া কলিজার একটা হতবাক মানুষ। এই সময়টাতে সারা দুনিয়ায় আঁধারের রাজত্ব চলছে।
কে মানুষটা? কেন এসেছিল? গোলাপ কেন? এত রাতে কেন? লুকিয়ে কেন?
রহস্যটা কি?
এরপর থেকে প্রতি রাতে শ্রাবনীর বাবা খুজলেন মানুষটাকে। আর আসে নি। পুরো বছরের কোন রাতেই খুজে পাওয়া গেল না মানুষটাকে।
শ্রাবনীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
সেই রাতেই আবার গোলাপ পাওয়া গেল কবরটাতে। এবার বাইশটা গোলাপ। গত বছরের চেয়ে একটা বেশি। নিশ্চয়ই ঐ লোকটা এসেছিল। কখন অাসলো; কখন গেল টের পাওয়া গেল না কেন? শ্রাবনীর বাবা ভাবতে থাকে।
পরের বছর একই ঘটনা। এবার গোলাপ তেইশ টা। এবারো খুজে পাওয়া গেল না। অবাক হবার মত কান্ড।কষ্টের প্রাচীর ভেদ করে চারাগাছের মত চিরচির করে রহস্যটা আরো রহস্যঘন হয়ে উঠছে।
শ্রাবনীর বাবা রহস্যের একটু আন্দাজ করতে পারলেন। বোঝা গেল সামনের মৃত্যুবার্ষিকীতে সাদা পাঞ্জাবির মানুষটা আবার আসবে। চব্বিটা গোলাপ হয়তো থাকবে সেই রাতে। প্রতি বছর একটা করে গোলাপ বেশি নিয়ে আসে মানুষটা। সহজ হিসাব।
চলে যায় দিন। মাস। তারপর বছর।
এবার এই রাতে শ্রাবনীর বাবা কবরের পাশে সাদা পেজে একটা চিঠি লিখে রাখলেন- "জানি আপনি আজ আসবেন। কে আপনি? কেন এসব? আমাকে আর কষ্ট দিবেন না। এবার দেখা করবেন, প্লীজ"

গভীর রাত। একটা মাইক্রোবাস হেডলাইট অফ করে আসছে। সাউন্ড নাই। কবরের পাশে এসে দাড়িয়েছে। আবার সেই একটা মানুষ। গাড়ি থেকে নেমে আসছে। এক হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। আরেক হাতে একটা গোলাপের চারা।
দূর থেকে শ্রাবনীর বাবা লক্ষ্য করছে সব। আজ অাঁধারটা কম। সব বোঝা যাচ্ছে। লোকটা আজ মাইক্রোবাসে আসলো কেন? লোকটা এতো রহস্যের জন্ম দিচ্ছে কেন?
গোলাপ কবরে রাখতেই লোকটার চোখ পড়লো সাদা কাগজটার দিকে। কাগজটা হাতে নিয়ে ফেলে দিল। লোকটা ভাবলো, মাত্র তিন বছরেই মেয়েটাকে ভুলে গেল সবাই! কবরে কাগজের টুকরা পড়ে থাকে; ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না বাড়ির লোকজন। কি নিষ্ঠুর আশ্চর্য!
এটা যে একটা চিঠি হতে পারে লোকটা আন্দাজ করতে পারে নি। কাগজটাকে বিরক্ত হয়ে কবরের পাশে ফেলে দেয়।
তারাতারি হাত দিয়ে কবর খুড়তে থাকে লোকটা।
শ্রাবনীর বাবা দুর থেকে দোখছেন সব। লোকটা কবর খুড়ছে কেন? তিন বছর পরে লাশ টা তুলে চুরি করে নিয়ে যাবে নাকি? এ জন্যই মাইক্রোবাস নিয়ে এসেছে? এবার স্থির থাকতে পারলেন না।
পাশে গিয়ে দাড়ালেন শ্রাবনীর বাবা। বুঝতে পারে নি লোকটা। সব নিস্তব্ধ। সব স্থির। শুধু লোকটা হাত দিয়ে মাটি খুড়ছে! অল্প অল্প আলোতে সাদা পাঞ্জাবিটা অদ্ভুত লাগছে।
-এই যে শুনুন!
-কে!
হন্তদন্ত হয়ে লোকটা উঠে দাড়ায়। চুনোপুঁটির মত ভীত কলিজা নিয়ে কবুতরের মত ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে।
কাঁধে হাত দিয়ে অভয় দেয় শ্রাবনীর বাবা। বাসায় নিয়ে যান লোকটাকে। চার গ্লাস পানি ঢক্ঢক্ করে খেয়ে নিল লোকটা। রুমের লাইটে স্পষ্ট করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন মানুষটাকে। চিনতে পারলেন উনি।
-জানাযার নামাজে আসা ঐ ছেলেটা তুমি? খুব কেঁদেছিলে সেদিন। তাই না?
-জ্বি এসেছিলাম।
-নাম কি?
-রাতুল।
-কবর খুড়ছিলে কেন? আমার সাথে কিসের শত্রুতা? লাশ চুড়ি করবা?
-না; না
-এত বছর ধরে এত নাটক করার কি আছে? একটা বাবাকে কষ্ট দেবার কি আছে? কে তুমি? কেন এসব?
রীতিমত আহাজারি করতে থাকে শ্রাবনীর বাবা। তিন বছর আগে ছেড়া কলিজায় জন্ম নেয়া ক্ষত থেকে আজ খুব বেশী রক্ত ঝড়ছে। বিক্ষত স্থানে কেউ যেন চাকু দিয়ে থেমে থেমে আরো ক্ষত তৈরি করছে।
শ্রাবনীর মা এর মধ্যে সব শুনেছেন। আড়াল থেকে। তিনিও স্থির থাকতে পারলেন না। ভিতরে জ্বলন্ত সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আবার দাউদাউ করে জ্বলতে লাগল। ভুমিকম্প হয়ে গেল মায়ের হৃদয়ে। তিন বছর আগে সন্তান হারা শোকটা আজ হঠাৎ আবার নতুন শোক হয়ে গেল। ভিতরটা শূন্য শূন্য লাগছে ওনার।
আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তিনি আড়াল থেকে রুমে ঢুকলেন। স্বামির পাশে বসলেন। শ্রাবনীর বাবা বুঝতে পারলেন, তার স্ত্রী সব শুনে ফেলেছে। আর গোপন করার কিছু নাই।
অবশেষে কথা বলা শুরু করলো রাতুল। বাবা-মার চৈত্রের রোদে শুকিয়ে যাওয়া খাঁ-খাঁ তপ্ত হৃদয়টা এক ফোঁটা করে বৈশাখি পানি পেতে থাকল। কখনো কখনো কালবৈশাখী ঝড়ের মত মা-বাবার হৃদয়টার একেকটা ডাল-পালা মট মট করে ভেঙে দিচ্ছিল।
বলতে থাকলো রাতুল। ও শ্রাবনীর বন্ধু। খুব ভাল বন্ধু। ক্লাসমেট। দুজনের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা।
প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে গোলাপ গুচ্ছ নিয়ে রাতুল-ই আসত। তরতাজা গোলাপ গুলি না দিলে যে খুবই অন্যায় হয়ে যেত। মেয়েটা গোলাপের প্রতি অনেক দুর্বল ছিল। চলে যাবার শেষ দিন শ্রাবনী রাতুলের কাছে একুশটা গোলাপ চেয়েছিল। তখন ওর বয়স একুশ ছিল। মোয়েটার আব্দার ছিল; প্রতি জন্মদিনে ওর বয়স যত হবে; ততগুলি গোলাপ তাকে উপহার দিতে হবে। দিতেই হবে।
আব্দার রক্ষা করতে পারে নি রাতুল। জন্মদিনের আগেই মেয়েটার মৃত্যুদিন ধার্য হয়ে যায়।
মাইগ্রেইনের ব্যাথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে সর্বনাশ হয়ে যায় শ্রাবনীর। চেকআপ করা হয় অনেক। কি যেন এক অসুখের নাম বলেন ডাক্তার। বেশি দিন আর নাই শ্রাবনীর। শ্রাবনীর শ্রাবন সন্ধ্যা অচিরেই নেমে আসছে। ডাক্তার বললেন, সুর্য ডুবি ডুবি।
শুধু রাতুল কে জানায় শ্রাবনী। মাকে না। বাবাকেও না।
অবশেষে সবসময় বিষন্ন থাকত শ্রাবনী। প্রায়ই কাঁদত ও। রাতুল সান্ত্বনা দিতে পারতো না। জীবন-মৃত্যুর মোহনায় সান্ত্বনা হারিয়ে গেছে। বাবা-মাকে জানাতে নিষেধ করে শ্রাবনী।
সেদিন শেষ বিকেল। নদীর পাড়ে যাবার বায়না ধরল শ্রাবনী। সুর্যটা ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। হঠাৎ রাতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আচ্ছা রাতুল, আমি যদি শেষ বিকেলের সুর্যের মত সত্যি ডুবে যাই! যদি না থাকি তাহলে কি বাবা-মার জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে? ওরা খুব মিস করবে, নারে? আচ্ছা তুই কি ভুলে যাবি? গোলাপ দিবি না?"
থমকে যায় রাতুল। এমন কথা কোন দিন এভাবে বলে নি শ্রাবনী।
অনেক খুজে যখন গোলাপ নিয়ে আসল রাতুল; তখন মেয়েটা বাসায় চলে গেছে। গোলাপ গুলি দেয়া হয় নি। অনেক দেনা জমা হয়ে গেছে। বাকির খাতায় জমা হয় গোলাপ। প্রতিবছর একটা করে দেনা বৃদ্ধি পায়। প্রতি জন্মদিনে তাকে ফুল দেয়া হয় না। মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রাবনীর কষ্ট কমানোর এক ব্যার্থ প্রয়াস রাতুলের।
স্কলারশীপ পেয়েছে রাতুল। অনার্স শেষ। বেলজিয়ামে মাস্টার্স করবে ও। তিন বছর থাকতে হবে ওখানে।
এই তিন বছর গোলাপ দেয়া হবে না। তাই গোলাপ গাছ নিয়ে এসেছে রাতুল। তারাতারি গাছটা রোপন করতে চেয়েছিল ও। কবরটা পাশটা তাই হাত দিয়ে খুড়ছিল। কবরে একটা গোলাপ গাছ থাকবে। রাতুল থাকবে না; কথা দেয়া কথা থাকবে। গোলাপ থাকবে।
রাত ঘনিয়ে আসছে। অনেক রাত। অন্ধকার অার অন্ধকার একাকার হয়ে জানান দিচ্ছে ; আলো নাই আলো নাই। শ্রাবনীর বাবা-মা দুজনেই নিস্তব্ধ হয়ে আছেন। দুজনের চোখেই শ্রাবনী-ধারা।
রাতুল বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে। আলতো করে অন্ধকারেই কবরের পাশে গোলাপ গাছটা লাগিয়ে দিল ও।
তারপর।
ধীরে ধীরে মাইক্রোবাসটা এগিয়ে চলছে। রাতটা এগিয়ে চলছে। সাথে চলছে রাতুল। পিছনে স্তব্ধ একটা মোড়ল বাড়ি; সেখানে স্তব্ধ দুইটা প্রানী। রেখে আসা একটা গোরস্থানে একটা কবর। ভিতরে নিস্তব্ধ শ্রাবনী; উপরে একটা গোলাপ গাছ।
.....গোলাপ গাছটা বড় হয় ; ফুল ফুটে। কবরের উপরে ঝড়ে যায় একেকটা ফুটন্ত গোলাপ।

Written by: শেষ সন্ধ্যার কবি

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

বেশ কিছুদিন আগে দেখা একটা ঘটনার
পূনরাবৃত্তি ঘটলো আজও ।
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্ট এ
জ্যামে আটকে আছি আমি । পাশের
রিক্সায় এক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা ।
দুজনেরই বয়স বেশি নয় । সহজেই অনুমেয়
বিয়ে হবার দুই তিন বছরের বেশি হয় নি
। ভদ্রলোকের কোলে একটি ফুটফুটে শিশু
। ভদ্রমহিলা ফোনে কথা বলছেন ।
হঠাত্ শিশুটি কাঁদতে শুরু করলো । বাবা
নানা ভাবে কান্না থামানোর
চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই শিশুটির
কান্না থামছে না ।
মা বারবার তার সন্তানের দিকে
তাকাচ্ছেন আর তড়িঘড়ি করছেন
ফোনে কথা শেষ করার জন্যে । এদিকে
শিশুর কান্না আরো বেড়ে গেছে ।
বাবা কিছুতেই থামাতে পারছেন না

ততক্ষণে সবার নজর সেই রিক্সার দিকে

অবশেষে, তড়িঘড়ি করে ফোনে কথা
শেষ করে হন্তদন্ত হয়ে মা যখনই শিশুটি
কোলে নিলেন তখনই তার কান্না
থেমে গেলো ।
পরম আদরে মা জড়িয়ে নিলো প্রিয়
সন্তানকে ।
সাখে সাথেই হালকা করে আর একটু
কাঁদলেন শিশুটি । হয়তো অভিমান
হয়েছিলো মায়ের উপর । আর মায়ের
চোখের কোণে ঝিলিক দিলো এক
টুকরো রঙিন হাসি ।
সত্যিই পৃথিবীর সব সন্তানের জন্য
মায়ের কোলই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় ।

জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে । রিক্সা ছুটছে
গন্তব্যে । হঠাত্ এক ভালো লাগার
শিহরণ বয়ে গেলো পুরো শরীর জুড়ে ।

"তোর মত একটা বর চাই"

যে মেয়েটা আমায় বারবার বলতো- "তোর মত একটা বর চাই"।
আমি শুধাইতাম- "কেন কি আছে আমার মাঝে?"
মেয়েটা কিছু না বলে খিলখিল করে হাসতো।
অনেকটা হাসার পর বলতো- "তোর মত স্বামী হলে আমি আমার মত চলতে পারবো, তুই তো খুব ভালো তাই।"
আমিও তার নির্বোধ কথা শুনে হাসতাম আর বলতাম- "দেখিস তুই ঠিক তোর মতই চলবি। শুধু আমি একটু ভিন্য রইবো।"
তখন আর কি, এইভাবেই শেষ হল এসএসসি নামক অধ্যায়। আমি চলে আসি কাঁচঢাকা শহরে, ইট পাথরের ভাঙ্গা দালানে। সে পরে থাকে ঐ গ্রামে।
শহরে আসার সময় মেয়েটা আমায় একটা চিঠি দেয়, ছোট চিরকুট ধরা যায়। যা লিখা ছিল, তার দুষ্টু হাতে মিষ্টি করে- "তুই দোয়া করিস, আমার স্বামী যেন তোর মত বন্ধু হয়। আমাকে আমার মত চলতে দেয়। তুই জানিস তো পড়ালেখা ছাড়া আমি আর কিছুই জানিনা। হ্যাঁ, ভালো থাকিস।"
চিঠিটা আজও মানিব্যাগ এর চিপায় রাখা। হয়তো অযত্নে কিন্তু মাঝে মধ্যেই খুলে পড়ি। চিন্তা করি কোথায় গেল সেই দিন!
কয়েকদিন পূর্বে বাড়ি গেলাম, জানতে পারলাম বন্ধুটার বিয়ে হয়েছে। বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছে সে, আমার হঠাৎ দেখা। আমি যা দেখলাম তা আমায় বিস্মিত করলো।
তার সাড়ে তিন হাত বডিতে সে চৌদ্দ হাতের শাড়ি জড়িয়েছে খুব গুছিয়ে। হাতে চুড়ি, মেহেদীর লাল গাড় রং এখনো যায় নি। স্বামীর সাথেও খুব মানানসই হয়েছে। আজ সে সব পারে।
শাড়ি পড়তে, রাঁধতে, চুল আঁচড়াতে, সংসার নামক যন্ত্র গুছাতে। সব পারে।
আমায় দেখা মাত্র সেই অভিমানের সুর দিলো তুলে- "কি একটা চিঠির উত্তর দিলি, আর দিলি না?"
আমার ভাষা নেই, কি বলবো। আমি যে একটা চিঠি ই পেয়েছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম- "চিঠি কার কাছে দিলে? যে আমার হাতে পৌঁছায়নি?"
সে বলল- "কেন বাবার কাছে আর তোর দোলা ভাইয়ের কাছে।"
আমি কিছু বললাম না। শুধু চুপ থেকে ভাবলাম, তারা কি আমাদের বন্ধুত্বটাকে প্রেম ভাবলো?
সে বলে উঠলো- "জানিস তুই যে চিঠিটা দিয়েছিল, এখনো আছে। হঠাৎ উদাস মনে পড়ি। এই আমার চিঠিটা আছে?"
তার চোখে পানিএসে গেল, আমি নিস্তব্ধ। আস্তে আস্তে সে যে আমায় ভালোবেসে ফেলেছিল ঠিক আমার মত করে সেটা বুঝতে পারলাম।
পারলেও কিছু করার নেই, তার স্বামী আমার দোলা ভাই।
আবার চলে এসেছি বাড়ি থেকে, সেও সবকিছু করতে পারে। আমি নাহয় এটাই করলাম। জানিনা কতটুকু ছিল প্রীতি। তবে বন্ধুত্বটা শত পার্সেন্ট।
"একটা বড় ভাইয়ের বাস্তবতা এই লিখাটা। বড় ভাইকে বলতে হয়- ভাই এগুলায় দেরি করতে নেই।"

লিখা-শেষ সন্ধ্যার কবি

LOve Letter

বরাবর,
জা............ন,
বিষয়ঃ ডেটিং এ গিয়ে কম খাওয়ার
জন্য আবেদন ।
বিনীত নিবেদন, এইযে আমি তোমার
বর্তমান একজন দরিদ্র প্রেমিক । ↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
↓↓↓
আমার বাবা একজন সামান্য সরকারি
কর্মচারী ।
ঘরে প্রেম করার যোগ্য আরও ছোট একটা
ভাই আছে।
তাই
আমরা দুই ভাই যদি একই হারে
আব্বাজানের পকেট মারি
তাইলে
ধরা খাওয়ার বিশাল সম্ভবনা আছে এবং
যদি একবার ধরা পড়ি
তাহলে আমরা দুজনই ব্যাপক প্যাঁদানির
সম্মুখীন হব!
এমন অবস্থায় তুমি ডেটিংএ গেলে যেই
হারে ভোজন
করতে থাকো তাতে আমি কেন,
বিলগেস্টের ছেলের ও ক্রেডিট কার্ডে
লাল বাত্তি জ্বলে উঠবে!
অতএব জান তোমার নিকট আমার আকুল
আবেদন এই যে,
আমার এবং আমার আব্বা জানের পকেটের
কথা চিন্তা করে
তুমি একটু ডায়েট কন্ট্রোল করার চেষ্টা
কর
নিবেদক,


Admin:
শেষ সন্ধ্যার কবি