শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫

`~`~`~`অবুঝ ভালোবাসা`~`~`~`

Written by : শেষ সন্ধ্যার কবি ·

আনমনা মনে বসে আছি বাসার ছাদে। মনটা খুব খারাপ-ই ছিল। তাই বসে বসে হুমায়ন আহমেদ স্যারের লেখা গল্প পড়তেছি। হঠাৎ-ই ম্যাসেজের টোনে আমার আনমনা ঘোর কাটলো। দেখলাম মেঘলার ম্যাসেজ ছিলো। মেঘলা আমার সাথেই পড়ে।
মেঘলা- কিরে কি করিস। আর আজ স্যার ক্লাসে কি পড়া দিয়েছেন।
আমি- কিছুনা,, জানি না।

মেঘলা- জানি না মানে কি?
আমি- আজ ক্লাসে যাই নি, তাই জানি না।
মেঘলা- সেকি তুই ক্লাসে যাস নি, কেন শরীর খারাপ নাকি।
আমি- না,, মন খারাপ।

মেঘলা- কেন, ,তুই মিথ্যা বলতেছিস। আমায় বলবি না স্যার কি পড়া দিয়েছেন। কাল স্যারের হাতে আমায় মার খাওয়াবি আমায়। তাই বলতেছিস না।
আমি- তোর যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারিস। আর তুই আমাকে থেকে এই সব পড়ার কথা শুনতে চাস কেন। তোর তো আরও অনেক কেউ আছে শোনার মত।
মেঘলা- এমন করতেছিস কেন। তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোকে বলবো না তো কাকে বললো বল।

আমি আর কোনো রিপ্লাই দিলাম না। মনে হচ্চে মেয়েটাকে একটু বেশি বেশি বলে ফেলেছি। কিন্তু কি করবো আমার তো সহ্য হয় না। সে অন্য কোনো ছেলের সাথে ঘটা করে বন্ধুত্ব করুক। কেন জানি কিছু বুঝতে পারি না। ওর প্রতি আমি এত দূর্বল কেন। পরে দিন ক্লাসে গেলাম গিয়ে সবাইকে দেখছি, কিন্তু মেঘলা নেই। মেঘলার কাছের বান্ধবী সূচনাকে বললাম," মেঘলা আসেনি। সূচনা বললো, " দেখছি না ওর ফোনটাও বন্ধ। আমি বললাম ও আচ্চা ঠিক আছে। ভাবতেছি মেয়েটার কি হয়েছে। গতকালকেও ক্লাসে আসেনি,আবার ফোনও বন্ধ। গতকাল ওর সাথে আমার এমনটা করা মোটেও ঠিক হয়নি। ভাবতেছি ওর বাসায় যাব। এর আগে একবার গিয়েছিলাম ওর সাথেই। গেলে যদি কিছু মনে করে। আবার মনে হচ্ছে যা মনে করার করুক।

ওর বাসায় গিয়ে বুয়ার কাছে জানতে পারলাম। মেঘলা অনেক আগেই বেরিয়ে পড়েছে। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কোথায় যেতে পারে। হঠাৎ মনে হলো ওর একটা প্রিয় জায়গা আছে। মন খারাপ হলেই চলে যেত সেই জায়গায়। জায়গাটার নাম সুখধানী। সবাই বলে সেই খানে গেলে নাকি মানুষের মন ভালো হয়ে যায়। এখান থেকে সিএনজি করে গেলে ১০ মিনিট সময় লাগে। আমি দেরি করলাম না চলে গেলাম। গিয়ে একটু দুরে দেখি লেকের পাড়ে মেঘলা মন খারাপ করে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক অভিমান করেছে মেয়েটা।

আমি তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই, সে আমায় দেখতে পেল আর চিৎকার করে বললো, তুই এখানে কেনো এসেছিস। আমি কিছু বললাম না,,কারণ সে রেগে গেলে কেঁদে ফেলবে। আর আমি ওর কান্না দেখতে পারবো না। আমি ওর সামনে গিয়ে হাটুতে ভর দিয়ে বসলাম এবং একটা কান ধরে বললাম," সরি,, আর কোনো দিন তোর সাথে এমন করে কথা বলবো না। মাফ করে দে।
মেঘলা- আমার মাফ করে দেওয়ায়,, না দেওয়ায় তোর কি যায় আসে।
আমি- আসে,,যায় আসে। তোকে সেটা বুঝাতে পারবো না।
মেঘলা- তাই নাকি, ঠিক আছে। একটা কান ধরলে হবে না। দুইটা কান-ই ধরতে হবে।
আমি- কি ভাবে ধরবো।

মেঘলা তার নিজের কান ধরে দেখিয়ে দিলো। আমি বললাম," ঠিক আছে,ঠিক আছে।তোকে কান ধরতে হবে না। যা মাফ করে দিলাম। মেঘলা রেগে গিয়ে আমার বুকে কিল-ঘুসি মারতে মারতে বললো," শয়তান তোকে আমি কখনোও ক্ষমা করবো না। যা দুর হ। এই বলে মেয়েটা সত্ত্যি সত্ত্যি কাদতে লাগলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সাথে সাথে দুই কান ধরে উঠবস করতে লাগলাম পাগলের মত। মেঘলা হঠাৎ-ই হাসতে লাগলো। আমি কান ধরেই ওকে বললাম কি হইছে পাগলীর মত হাসতেছিস কেনো। মেঘলা আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আর আমি তার হাসি দেখছি। দেখছি হাসলে ওকে কতো মায়াবী লাগে। মেঘলা হাসতে হাসতে বললো" একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখ। আমি তাকিয়ে যা দেখলাম, আশেপাশে যতো মানুষ আছে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আর মেঘলা এই দিকে হাসতেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই একটা বুদ্ধি বের করলাম আমিও জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। তার পরে পাশে তাকিয়ে দেখি সব মানুষ গুলোও হাসতেছে আবার কেউ কেউ হাত-তালি দিচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবলাম লোক গুলো কি আমায় জোকার ভাবছেন নাকি। আমি মানুষ গুলোর দিকে আর লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না। আমি মেঘলাকে বললাম চল এখানে থেকে। মেঘলা কিছু বলছে না আমার দিকে থ মেরে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে, আমি ওর প্রতি আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়ছি। মনে হচ্ছে মানুষ দেখলে তো কি হলো। ওর রাগ তো ভাঙাতে পেরেছি। আমি আবার বললাম বাসায় যাবি না। মেঘলা তখন ঘোর কাটিয়ে বললো," হ্যাঁ, চল।

আমরা স্থান ত্যাগ করলাম। একই রিকশাতে আমরা বাসার পথে যাচ্ছি।
ভাবছি আমি মেঘলাকে সব কিছু বলে দেবো আমার মনের কথা। যা হবার হবে।
আমি- মেঘলা তোকে জরুরি একটা কথা বলার ছিলো।
মেঘলা- বল কি বলবি।
আমি- আমি সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারবো না।
মেঘলা- আচ্ছা ঠিক আছে। তুই তোর মত করে বল।
আমি- আমি তোকে ভালোবাসি।
মেঘলা- কি বললি।
আমি- ভয়ে ভয়ে বললাম," সত্তি তোকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।
মেঘলা- আমি জানি।
আমি- কি জানিস।
মেঘলা- তুই আমায় ভালোবাসিস। কিন্তু এটা জানতাম না যে তুই এটা বলতে এত সময় নিবি।
আমি- তুই আমায় ভালবাসবি।
মেঘলা- বুদ্ধু,,, এটা আবার মুখে তোকে বলে দিতে হবে। বুঝতে পারিস না।
আমি- না আমি বুঝতে পারি না।
মেঘলা- তোকে বুঝতে হবে না, আমি বুঝায়ে দিবোনি।
আমি- আমি তোর জন্য মরতেও পারি।
মেঘলা- তোকে মরতে হবে না, তুই আমার জন্য বেঁচে থাক।
আমি- তুই আমায় কখনো ভুলে যাবি না তো।
মেঘলা- এই জীবন থাকতে না।তুই আমায় কথা দে আমায় সারাজীবন এই ভাবে ভালোবাসবি তো।
আমি- জীবন কেনো মরণও আমাদের কখনো আলাদা কর‍তে পারবে না।
এই ভাবে চলতে আছে শিপলু আর মেঘলার ভালোবাসা। আজীবন চলবে ~~~অবিরাম ঝর্ণার মত।

লেখাঃ~শেষ সন্ধ্যার কবি ·

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন